চাল নিয়ে চালবাজি, বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ

0
99
চাল

চলছে আমনের ভরা মৌসুম। এরপরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই বেড়েছে চালের দাম। এবার গরীবের মোটাচালসহ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বিক্রেতা ও মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছেন। আর পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি মোকামে দাম বেড়েছে। মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও জানান তারা।

আড়তদাররা বলছেন, মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিলে আড়তদারদের কিছুই করার থাকে না। মূলত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল থাকলেও নির্বাচনের পর থেকেই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।

আর মিল মালিকদের দাবি, বাজারে ধানের যোগান কম। তাই বেড়েছে চালের দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ- বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) অব্যাহত রেখেছে খাদ্যঅধিদপ্তর। পাশাপাশি ডিলারদের মাধ্যমে নিম্ন-আয়ের মানুষের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

এরপরও চালের দাম স্থিতিশীল থাকছে না। বেশির ভাগ মিলার চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মান ও ধরনভেদে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা।

সোমবার (১৫ জানুযারি) রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরপুল, পলাশী বাজার, নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে যে মোটা চালের কেজি (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ছিল ৫০-৫২ টাকা, তা এখন ৫৪-৫৫ টাকা।

মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর ২৮) ছিল ৫৫-৫৮ টাকা, তা এখন ৬০-৬২ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইল ছিল ৬২-৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮ থেকে ৮০ টাকা।

মো. আলাউদ্দিন। থকেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, নির্বাচনের আগে চালের দাম অনেকটা স্থির ছিল। নির্বাচনের পর প্রায প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। এভাবে চলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মত যারা সীমিত আয়ের মানুষ তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। সরকারের এদিকে নজর দেওয়া জরুরি। গরীব মানুষকে বাঁচাতে হবে। গরীব মেরে লাভ কি?

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের শুরুতে বাজারে চালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছিল। তবে দাম বেশি বেড়েছে নির্বাচনের ঠিক পরপর। আমনের উৎপাদন ভালো হলেও রেকর্ড দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। বছরের শুরুতে ধানের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, মিলে ও বাজারে চালের ঘাটতি নেই। অথচ দাম বাড়ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে বর্তমান বাজারে কিছুটা অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা। বর্তমানে ধানের ভরা মৌসুম। এই সময়ে চালের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করলে যারা দাম বাড়াচ্ছে, তাদের ধরা সম্ভব হবে।

ক্রেতাদের দাবি, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে দ্রুত বাজার তদারকি করতে হবে। এই তদারকি হতে হবে সরবরাহ ব্যবস্থার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে। গুদামজাত করে চালের সংকট সৃষ্টি করা সিন্ডিকেটকে ধরতে হবে। তবেই রেহাই মিলবে।

শামীম আহসান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.