চামড়া খাতের ঋণের ৩৯ শতাংশই খেলাপি

0
121
চামড়া

চামড়া খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ রয়েছে ১৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এ খাতের মোট ঋণের যা প্রায় ৩৯ শতাংশ। পুরো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার যেখানে ৯ শতাংশ। চামড়া খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনও শিথিল শর্তে নতুন ঋণের ব্যবস্থা করেছে। কখনও পুরোনো ঋণ নবায়নের সুযোগ দিয়েছে। এত সব সুযোগের পরও বড় অঙ্কের ঋণ এখন খেলাপি।

ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশে সেভাবে পরিবেশসম্মত কারখানা গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তর নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরি হয়। জটিলতার মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদারের ব্যাংক ঋণ নিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। ব্যাংক ও বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তার নামে জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বের করে নেয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর নেওয়া ৪০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা জনতা ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, অনেক আগে থেকে চামড়া খাত সমস্যায় রয়েছে। এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশসম্মত সনদ নেই। ফলে অনেক ব্র্যান্ড এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনতে চায় না। আবার বেশ আগে বিশ্ববাজারে চামড়া রপ্তানিতে ধস নেমেছিল। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান সময়মতো ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চামড়া খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণস্থিতি রয়েছে ১৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদারের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, যার সবই বেশ আগে থেকে খেলাপি। অবশ্য অনারোপিত সুদ যোগ করলে ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছে ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ অনেক বেশি। ক্রিসেন্ট গ্রুপের বাইরে অন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। মূলত নব্বইয়ের দশকে বিতরণ করা চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই ফেরত আসেনি। যে কারণে ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চামড়া খাতের ঋণ নিয়মিত করতে বারবার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যথাসময়ে ঋণ ফেরত দিতে না পারা প্রতিষ্ঠানও যেন চামড়া কেনার ঋণ নিতে পারে, সে জন্য গত বছর কোরবানির ঈদের আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এর আগে ২০২০ সালেও চামড়া খাতের ঋণে বিশেষ বিবেচনায় সুদ মওকুফ, মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠন এবং পুনঃতপশিল বা এক্সিট সুবিধা দেওয়া হয়।

এবার ২৩৫ কোটি টাকার ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোরবানির পশুর চামড়া কেনার ঋণ এবারও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্রীয় মালিকানার চারটি ব্যাংক এবার ২৩৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর ছিল ২৪৫ কোটি টাকা। আর করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে চামড়া কেনায় ৫৫৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছিল এসব ব্যাংক। এবার জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি, অগ্রণী ৮০ কোটি, রূপালী ৩০ কোটি ও সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যদিও এ পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে ব্যাংকগুলো সংশয়ে রয়েছে। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সিটি, বেসিক, বাংলাদেশ কমার্স, এনসিসি, আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংক নির্দিষ্ট কয়েকজন গ্রাহককে চামড়া কিনতে ২৪ কোটি টাকার ঋণ দেবে।

ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে কেবল নিয়মিত থাকা ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার ঋণ পেয়ে থাকেন। অবশ্য কেউ শেষ সময়ে এসে নবায়ন করলে তাঁকে ঋণ দেওয়া হয়। তবে অনেকে এখনও নবায়নের জন্য আসেননি। ফলে বরাদ্দ রাখা পুরো টাকা ঋণ দেওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তাঁরা জানান, চামড়া কেনার ঋণ দেওয়া হয় ৯ মাসের জন্য। তবে আশানুরূপ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলো আগের মতো ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায় না। এর মধ্যে চামড়ার দর অনেক কমে যাওয়ায় আগের মতো ঋণের প্রয়োজনও হয় না। এ ছাড়া চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক সতর্ক। এসব কারণে প্রতিবছর দেশে পশু কোরবানির সংখ্যা বাড়লেও ঋণের পরিমাণ কমছে।

ওবায়দুল্লাহ রনি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.