চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, তিনজন গুলিবিদ্ধ

0
127
হামলা ও সংঘর্ষের খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আলোচিত চনপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জয়নাল আবেদিন ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন কিশোর-তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ও আজ বুধবার সকালে চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্রের ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা হলেন চনপাড়ার সম্রাট পারভেজ (২১), রোমান (১৮) ও সানি (১৭)। গুলিবিদ্ধ তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, তিনজনেরই পায়ে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে আরও চার তরুণ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ তাঁদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্রের বাসিন্দা, পুলিশ ও সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ নভেম্বর চনপাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমানকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। এর পর থেকেই ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শমসের ও শাহাবুদ্দিন যৌথভাবে ওই এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে বজলুর রহমানের সহযোগী ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার জয়নাল আবেদিন হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। জয়নাল ফেরার পর ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ইয়াসমিন আক্তার তাঁর অনুসারীদের নিয়ে জয়নালের পক্ষ নেন। তখন থেকেই জয়নাল আবেদিন ও শমসের গ্রুপের মধ্যে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ শুরু।

এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ বজলুর রহমানের মৃত্যু হলে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদে নির্বাচনের জন্য জয়নাল আবেদিন ও মো. শমসের এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন। এতে বিরোধ আরও বড় আকার ধারণ করে।

গতকাল রাতের পর আজ সকাল নয়টার দিকে দুই পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ান

গতকাল রাতের পর আজ সকাল নয়টার দিকে দুই পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ান
ছবি: সংগৃহীত

সংঘর্ষের বিষয়ে স্থানীয় লোকজন বলেন, মো. শ্রাবণ (১৬) নামের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার এক কিশোর জয়নালের অনুসারী হিসেবে এলাকায় কাজ করত। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল রাত ১০টার দিকে মো. শাহাবুদ্দিন ওই কিশোরকে ডেকে মারধর করেন। পরে দিবাগত রাত ১২টার পর ইয়াসমিন আক্তারের অনুসারীদের নিয়ে জয়নালের অন্য অনুসারীরা শাহাবুদ্দিনের এলাকায় এসে তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেন। এ সময় ইয়াসমিন ও জয়নালের অনুসারীরা ফাঁকা গুলি ছোড়েন। পরে রাত দুইটার দিকে শাহাবুদ্দিন ও তাঁর বন্ধু শমসেরসহ ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মাদক ব্যবসায়ী রবিন, রায়হান ও তাঁদের অনুসারীরা জয়নালের লোকজনকে উদ্দেশ করে গুলি ছোড়েন। এ সময় জয়নালের লোকজনও পাল্টা গুলি ও ইটপাটকেল ছোড়েন।

গতকাল রাতের পর আজ সকাল নয়টার দিকে দুই পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ান। ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার নবকিশলয় উচ্চবিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে অফিস ঘাট পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। এতে জয়নালের অনুসারী সানি, সম্রাট পারভেজ ও রোমান গুলিবিদ্ধসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এ বিষয়ে কথা বলতে শমসের, শাহাবুদ্দিন ও জয়নাল আবেদিনের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তাঁদের সবার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। তবে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিক থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে রাত দুইটার দিকে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। বর্তমানের ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশের মৃত্যুর ঘটনায় মাদক প্রসঙ্গ উঠলে চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্র ব্যাপক আলোচনায় আসে। এ সময় চনপাড়ার মাদক ও অপরাধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) ও উপজেলার আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য বজলুর রহমানের নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে। ১৮ নভেম্বর বিকেলে র‍্যাব-১-এর একটি দলের অভিযানে চনপাড়ার পূর্বগ্রাম এলাকা থেকে বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যা মাদকসহ অন্তত ২৬টি মামলার আসামি ছিলেন বজলুর। গত ৩১ মার্চ কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বজলুর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.