গাজীপুরে একটি কেন্দ্রে মেয়রের ভোট দিচ্ছেন অন্যজন, অভিযোগ ভোটারদের

0
86
ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় নারী ভোটাররা। সকাল সাড়ে ১০টায় ভাওরাইদ হাজী রোকন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে

গাজীপুর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাওরাইদ হাজী রোকন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোপনকক্ষে ঢুকে ভোটারের বদলে অন্য ব্যক্তিরা ইভিএমে বোতাম চেপে মেয়রের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই কেন্দ্রের তিনজন ভোটার প্রথম আলোর কাছে এমন অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের মেয়র পদের ভোট অন্যজন দিয়ে দিয়েছেন। সরেজমিন এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন নিপু নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘আমি গিয়ে দাঁড়াইছি। আমার চয়েস মতো আমি টিপ দিমু। আমি দেখতাছি, আমার ভোটে টিপ একজন পুরুষ মানুষ দিয়ে দিছে। কেন দিবে উনি? মেয়রের টিপ ওই লোক দিছে, দুই কাউন্সিলের টিপ আমি দিছি।’

তাসলিমা আক্তার নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘আমাকে একটা ভোটও দিতে দেয় নাই। ওই খানে এক লোক দাঁড়ানো ছিল। উনি প্রথমে মেয়রের বোতামে একটা টিপ দিছে। পরে আমারে বলে, এবার আপনার পছন্দমতো দেন। আমি বলছি, ভোট কাটেন। আমার পছন্দমতো আমি তিনটা ভোট দেব। উনি ভোট কাটবে না। পরে আমাকে আর কোনো ভোট না দিতে দিয়ে উনি আমাকে বের করে দিছে।’

মোছা. বিলকিস নামের আরেক নারীও একই অভিযোগ করেন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসির ‘পরীক্ষা’ শুরু

এই তিন নারী ভোটারের এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বেলা পৌনে ১১টায় কেন্দ্রটির ৫ নম্বর বুথে যান এই দুই প্রতিবেদক। তখন সীমা আক্তার নামের এক নারী ভোটার গোপনকক্ষে ঢোকেন। সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর এজেন্টও ওই নারীর সঙ্গে সঙ্গে গোপনকক্ষে যান।

এজেন্ট কেন গোপনকক্ষে প্রবেশ করছেন, এমন প্রশ্নে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. তাফাজ উদ্দিন  বলেন, ‘আমার কিছু করার নাই।’

৫ নম্বর বুথটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর এজেন্ট মো. নুরুজ্জামান ছাড়া অন্য কোনো মেয়র পদপ্রার্থীর এজেন্ট ছিল না।

৯৬ বছরের সখিনা ইভিএমে ভোট দিয়ে খুশি

কেন্দ্রের আরেকটি বুথে গিয়েও দেখা গেল, মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে কেবল নৌকার এজেন্ট রয়েছেন। সেখানে কয়েকজন নারী ভোটারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর এক কর্মীর কথা–কাটাকাটি হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে নাসিমা নামের এক নারী বলেন, ‘আমি ইভিএমে ভোট দেওয়া বুঝি না। তাই আমি বলেছি, আমার সাথে আসা পাশের বাড়ির একজনকে বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু অন্য এক লোক এসে জোর করে চাপ দিতে চায়।’

নাসিমার সঙ্গে আসা আইরিন বলেন, ‘নাসিমা আমার পাশের বাড়ির। আমিই তো বুঝিয়ে দেব। অন্য লোক জোর করে আসে কেন?’

জানতে চাইলে ওই বুথের মেয়র পদপ্রার্থীর এজেন্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর লোক। আমরা এই বুথে তিনজন আছি। কেউ বুঝতে সমস্যায় পড়লে বুঝিয়ে দিচ্ছি। এখানে ভালো ভোট হচ্ছে।’

জয় নিয়ে শতভাগ আশাবাদী, ভোট দিয়ে বললেন আজমত উল্লা খান

এই কেন্দ্র নারীদের জন্য। কেন্দ্রটির অনেক ভোটারেরই ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে। আর তাঁদের সহযোগিতা করার নামে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা গোপনকক্ষে প্রবেশ করে নিজেদের পছন্দমতো অন্যের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন বলে পরে আরও অভিযোগ পাওয়া যায়।

এমন অভিযোগের বিষয়টি অজানা নয় সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদেরও। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছেও অনেকে এমন অভিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের বলেছি। তারা না বললে তো আমরা সহযোগিতা করতে পারি না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.