গণ অধিকারে বিভক্তি, নুরের ঘনিষ্ঠরা পক্ষ নিয়েছে রেজা কিবরিয়ার

0
92
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর—দুই নেতার বিরোধ থেকে গণ অধিকার পরিষদ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল।

রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক (নুর)—দুই নেতার বিরোধ শেষ পর্যন্ত ভাঙনের দিকে ঠেলে দিল গণ অধিকার পরিষদকে। এখন দলটি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হক ও তাঁর সমর্থকদের তৎপরতাকে অবৈধ বলে অভিযোগ করেন। দলের এই পক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন নুরুল হক। দুই পক্ষই একে অপরের ওপর গণ অধিকার পরিষদকে ভাঙার দায় চাপাচ্ছেন।

অনেক দিন ধরে গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতাকে ঘিরে দলটিতে অস্থিরতা চলছিল। সম্প্রতি সেই অস্থিরতা প্রকট রূপ নিয়েছিল। দলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, আহ্বায়ককে অপসারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যেই সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান। তাতে বলা হয়, দলের আহ্বায়ক পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনিই দলের আহ্বায়ক আছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে ১০ জুলাই দলের কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দলটির দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। রেজা কিবরিয়া দলের সদস্যসচিব নুরুল হকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ করেন।

১ জুলাই শনিবার গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকে নুরুল হকের নেতৃত্বে তাঁর সমর্থকেরা আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের পক্ষ থেকেই দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল।

এই অপসারণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলটির অন্য অংশ গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, দলের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস ও অপসারণ করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের দুই– তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২১ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৮১ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ১ জুলাইয়ের সভায় ৪৫ জন সদস্য উপস্থিত হয়। সভায় সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণের আহ্বান জানালে তা না করে প্রকাশ্যে হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলা হয়। ফলে অনেকেই ভোটদানে বিরত থাকেন।

সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকারীরা রেজা কিবরিয়ার অপসারণকে সম্পূর্ণ অবৈধ দাবি করেন। তাঁরা বলেন, রেজা কিবরিয়াই দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন।

সম্প্রতি দলটির দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। রেজা কিবরিয়া দলের সদস্যসচিব নুরুল হকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ করেন।

এ ছাড়া রেজা কিবরিয়া দলের তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেন। অন্যদিকে নুরুল হক পাল্টা অভিযোগ করেন, তাঁদের দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া অনেক দিন ধরে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সে জন্য তিনি অর্থ পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন নুরুল হক।

দুই নেতার বিরোধ থেকে দলের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, অনাস্থা প্রস্তাব, অপসারণের মতো ঘটনা ঘটেছে। তখন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বড় অংশকেই আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার পাশে দেখা যায়নি।

তবে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, সাদ্দাম হোসাইন, জাকারিয়া পলাশ, যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, তারেক রহমান, আবুল কালাম আজাদ ও আবু সাঈদ প্রমুখ। এই নেতারা দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম এবং দলেও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এসব নেতা এখন রেজা কিবরিয়ার পক্ষ নিয়েছেন। এর ফলে এখন রেজা কিবরিয়ার পাল্লাই ভারী হচ্ছে বলা বলা যায়।

কিন্তু সংবাদ সম্মেলনকারী এই নেতাদের দলছুট, পদবঞ্চিত ও সুবিধাবাদী বলে অভিহিত করেন দলের সদস্যসচিব নুরুল হক। তাঁর সমর্থকেরা ১০ জুলাই জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য পক্ষ এই কাউন্সিল মানছেন না।

এরই মধ্যে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে ইসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবেদনের সঙ্গে তথ্য যা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোই তাঁরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবেন।

তথ্য যাচাই করবে ইসি

গণ অধিকার পরিষদ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্যও আবেদন করেছিল নির্বাচন কমিশনের(ইসি) কাছে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে এই দলের আবেদনও ইসি প্রাথমিকভাব বাছাই করার পর তথ্য যাচাইয়ের তালিকায় রেখেছিল। এখন দলটির বিভক্তির মধ্যেই গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকারিতা ও অন্যান্য বিষয়ে তাদের দেওয়া তথ্য সরেজমিনে যাচাইয়ের দিন ঠিক করেছে ইসি।

গত বুধবার ইসি এই তথ্য যাচাইয়ের ব্যাপারে দিনক্ষণ জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহবায়ক রেজা কিবরিয়াকে চিঠি দিয়েছে। ইসির একজন উপসচিবের সই করা এই চিঠিতে ১০ জুলাই বেলা ৩টায় সরেজমিন তথ্য যাচাইয়ের সময় দলটির আহবায়ক, সদস্যসচিব ও দপ্তর সম্পাদককে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ দলের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এরই মধ্যে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে ইসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবেদনের সঙ্গে তথ্য যা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোই তাঁরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবেন।

দলটি ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলেছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার আগেই দলে এল বিভক্তি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.