কোনো ক্লাসে ভর্তি কাদামাটি, কোথাও আশ্রিত দুর্গতরা

বান্দরবানে বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষতি

0
120
স্কুলের ক্লাস রুমে জমে আছে কাদামাটি।

বান্দরবানে গত সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় কলেজও রয়েছে। বর্তমানে পানি নেমে গেলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও স্বাভাবিক পাঠদান শুরু করতে পারেনি। কোনো কোনো স্কুলের ক্লাস রুমগুলোর ভেতরে এখনও জমে আছে কাদামাটি। ভিজে কাঠপচা গন্ধ ছড়াচ্ছে চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ। আবার কয়েকটি স্কুলকে বন্যাদুর্গত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করায় সেগুলোতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা বলছেন, বন্যায় স্কুলগুলোর নথি ও বিভিন্ন আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির এই অঙ্ক কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা তাদের।

সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসরুমের ভেতরে এখনও কাদামাটি থিক থিক করছে। বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল সব কাদায় সয়লাব। প্রশাসনিক কক্ষটি পরিষ্কার করা গেলেও এখন পর্যন্ত জানালা, দরজা ও আলমারিতে কাদা লেগে আছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পটনো তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কাজের লোক না পাওয়ায় আমরা কয়েকজন শিক্ষক মিলে প্রশাসনিক রুমের কাদামাটি সরিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে ক্লাসরুমগুলোর কাদামাটি সরানো শেষ হবে।

আবার জেলা শহরের শহর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও দুর্গত মানুষ আশ্রিত আছেন। সোমবার পর্যন্ত সেখানে শিশুসহ ৪৫ জন দুর্গত মানুষ ছিলেন। তারা দু-এক দিনের মধ্যে বাড়িতে ফিরে গেলে এর পর শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বন্যায় বান্দরবান সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজের অনেক আসবাব ও কিছু নথি নষ্ট হয়েছে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলছে জানিয়েছেন সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক অজয় বড়ুয়া।

জেলার দুর্গম অঞ্চলের স্কুলগুলোয় বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। পাহাড়ের ভেতরে দুর্গম পাড়াগুলোয় অনেক স্কুল একেবারেই ভেঙে গেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চৌধুরী আবদুল্লা আল মামুন বলেন, বান্দরবানে এমন বন্যা আগে দেখিনি। বন্যায় আমাদের মোট ১২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৫টি, রুমায় ৬৮, রোয়াংছড়িতে ৬২, থানচিতে ৩৮, লামায় ৮৫, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৫৬ ও আলীকদমে  ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। লামা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম বলেন, জেলায় প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। শুধু লামা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যায় এখানকার ১৫টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এর পরও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে ৫৪ লাখ টাকা।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম জানান, এখনও সব উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা আসেনি। আসার পর জানা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তবে অনুমান করা হচ্ছে, ক্ষতির অঙ্ক কোটি টাকা ছাড়াবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.