কুড়িয়ে পাওয়া অর্ধলক্ষ টাকা প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিতে ৯৯৯-এ ফোন

0
104
প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিতে কুড়িয়ে পাওয়া টাকা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই ভাই জয় মজুমদার ও দীপ মজুমদার। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে পটুয়াখালীর মহিপুর থানায়, ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই ভাই। ফেরার পথে তাঁরা ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডিল কুড়িয়ে পান। সেই টাকা প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিতে তাঁরা প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে সেই টাকা থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হাতে তুলে দেন।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে কুয়াকাটার আলীপুর বন্দরের শেখ রাসেল সেতুর মহিপুর প্রান্তে এ ঘটনা ঘটে। জয় মজুমদার ও দীপ মজুমদার নামের ওই দুই ভাই গতকাল রাত একটার দিকে মহিপুর থানার ওসি খন্দকার মোহাম্মদ আবুল খায়েরের কাছে টাকাগুলো হস্তান্তর করেন।

জয় ও দীপ মজুমদারের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খাসপুকুরপাড় এলাকায়। জয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। দীপ রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। তাঁদের বাবা পিযুস কান্তি মজুমদার কলাপাড়া পৌরসভায় প্রধান সহকারী হিসেবে কর্মরত।

দুই ভাইয়ের এমন সততা দেখে ওসি খন্দকার মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘বর্তমানে অনেক তরুণ বিপথগামী। তবে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ওই দুই ভাই সত্যিই ব্যতিক্রম। তাঁরা কুড়িয়ে পাওয়া টাকা প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিতে আমার কাছে দিয়ে গেছেন। এমন তরুণেরাই এ দেশের গর্ব। তাঁদের সততা আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে যান জয় ও দীপ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কলাপাড়ায় ফেরার জন্য তাঁরা যানবাহন খুঁজছিলেন। ইঞ্জিনচালিত কোনো গাড়ি না পেয়ে তাঁরা একটি ভ্যানে করে আলীপুর বন্দরের শেখ রাসেল সেতুর কাছে এসে নামেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে দুই ভাই শেখ রাসেল সেতুর মহিপুর প্রান্তের পূর্ব পাশের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় টাকার একটি বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁরা বান্ডিলটি তুলে নিলে এক মোটরসাইকেলচালক তাঁদের কাছ থেকে সেটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুই ভাইকে জোর করে পাশের অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যান ওই চালক। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে টাকা পাওয়ার বিষয়টি জানান দুই ভাই। ৯৯৯ নম্বর থেকে জয়কে লাইনে রেখে মহিপুর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক মো. নুরুন্নবীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে মহিপুর থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে টাকার বান্ডিলসহ ওই দুই ভাইকে থানায় নিয়ে যান।

ওসি খন্দকার মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, তিনি পুরো ঘটনা শোনার পর কুড়িয়ে পাওয়া টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করতে উদ্যোগ নেন। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে এক ব্যক্তি থানায় এসে টাকা হারানোর কথা জানিয়েছেন এবং সপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছেন। প্রাথমিকভাবে টাকার বান্ডিলটি তাঁর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এরপরও কুড়িয়ে পাওয়া টাকার অন্য কোনো দাবিদার আছেন কি না, সেটা যাচাইয়ের জন্য তাঁরা আরও এক দিন অপেক্ষা করবেন। তিনি বলেন, দ্রুত প্রকৃত মালিকের কাছে টাকা তুলে দেওয়া হবে। ওই দুই তরুণকে রাতেই পুলিশের গাড়িতে করে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ।

জয় মজুমদার ও দীপ মজুমদার বলেন, শেখ রাসেল সেতুর মহিপুর প্রান্তের পূর্ব পাশের সিঁড়ির ঢালে টাকাগুলো পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। প্রথমে টাকার বান্ডিলটি তুলে নিতে তাঁদের সংকোচবোধ হচ্ছিল। পরে ভাবেন, অন্য কেউ পেলে টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিতে পারেন। তার চেয়ে প্রকৃত মালিককে খুঁজে দিলে তিনি উপকৃত হবেন। এর মধ্যে ভাড়ায় চালিত এক মোটরসাইকেলচালক এসে টাকাগুলো কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তখন তাঁরা সাহস ফিরে পান। পরে থানায় গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলেন এবং ওসির হাতে টাকা তুলে দেন।

ওই দুই তরুণ আরও বলেন, টাকাগুলো প্রকৃত মালিক ফিরে পেলে তাঁরা খুশি হবেন। এ কাজে সহযোগিতা করায় তাঁরা পুলিশ সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.