কাল পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২৯ দিনে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে নিহত ১৯

0
103
পশ্চিমবঙ্গের দেগঙ্গা এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৭ জুলাই

আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সরকার কাঠামোর মূল ভিত্তি ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই ত্রিস্তর হলো গ্রামপর্যায়ের গ্রাম পঞ্চায়েত, থানা পর্যায়ের পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পর্যায়ের জেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচন হবে রাজনৈতিক দলের প্রতীকে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপি, জাতীয় কংগ্রেস এবং বাম দলের প্রার্থীদের মধ্যে।

নির্বাচন হবে ৩ হাজার ৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৮ হাজার ৫১৩টি আসনে। ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৭৩০টি আসনে এবং ২০টি জেলা পরিষদের ৯২৮টি আসনে। এই লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে ৬১ হাজার ৬৩৬টি। আর ভোট দেবেন ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ২৩৪ জন ভোটার।

ভোট গ্রহণ সকাল ৭টায় শুরু হয়ে শেষ হবে বিকেল ৫টায়। ভোট গণনা হবে ১১ জুলাই।

গত ৯ জুন পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে আজ শুক্রবার ভোটের আগের দিন পর্যন্ত এই ২৯ দিনে এই রাজ্যের আটটি জেলায় নির্বাচনী সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই এবারের এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয়  বাহিনী নিয়োগ করেছে। সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য পৌঁছে গেলেও বাকিরা আজ রাতের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রুট মার্চ বা টহল শুরু করেছে। হিমালয় পাদদেশের লে থেকে আজ বিমানে করে পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ের এয়ার বেজে আনা হয়েছে ৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বহিনীর সদস্য।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই রাজ্যে শুরু হয় রাজনৈতিক সংঘর্ষ। মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রথম দিন ৯ জুন প্রথম খুন হন মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে এক কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। আর আজ নির্বাচনের আগের দিন মুর্শিদাবাদে খুন হন আরেক কংগ্রেস কর্মী অভিনন্দন মণ্ডল। কংগ্রেস দাবি করেছে, অভিনন্দনকে বাড়ির সামনে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আজ বনগাঁর বর্মপুরেও সংঘর্ষ হয়েছে।

এ ছাড়া আজ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ্যের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় আইএসএফ এবং সিপিএমের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। মালদার রতুয়ায় একাধিক বাড়িতে আগুন লাগোনো হয়েছে। বীরভূমের দুবরাজপুরে বাগান থেকে ২০০ বোমা উদ্ধার হয়েছে। বোমা উদ্ধার হয়েছে দেগঙ্গা, আমডাঙ্গ, জলপাইগুড়ি থেকেও। দিনহাটায় কংগ্রেস কর্মীকে কোপানো হয়েছে। কোচবিহারে তিন বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া ফারাক্কা, ডোমকল, কুলপি, দিনহাটা, নদীয়াতেও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। কোচবিহারে বিজেপির এক প্রার্থীর বাড়ির সামনে বোমা রাখা হয়। জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের পার্টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বারাসাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবিতে মিছিল হয়েছে।

আজ নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকেন্দ্রের বুথ অনুযায়ী মোতায়েন করা হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের। বড় ভোটকেন্দ্রে বেশি এবং ছোট ভোটকেন্দ্রে কমসংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী।

এবার আরও থাকছে ভিন রাজ্যের পুলিশও। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হচ্ছে ৮২২ কোম্পানি। সঙ্গে  থাকছে বিভিন্ন রাজ্যের ৭০ হাজার পুলিশও।

গত ২০১৮ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ১৪ মে। ওই নির্বাচনের দিন খুন হয়েছিল ২৩ জন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসন বিনা যুদ্ধে জিতেছিলেন শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা। বাকি আসনেও সিংহভাগ দখল করেছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারও সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল শাসক দল। কিন্তু বিরোধী দল বিজেপি, কংগ্রেস এবং বাম দলের প্রচণ্ড বাধার মুখে এবার অতটা আসন দখল করতে পারেনি। তবে অন্তত ১২ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে তারা।

এবার এই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৮৪ হাজার ১০৭টি, বিজেপি ৫৪ হাজার ৭৪৯টি, সিপিএম ৪৭ হাজার ৩৫৮টি এবং কংগ্রেস ১৬ হাজার ১৪৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.