কর ও ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত নয়

0
134

কর ও ঋণখেলাপিদের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। তিনি মনে করেন, ব্যাংক ঋণের ৫ বা ১০ শতাংশ জমা দিয়ে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ কোনোভাবেই থাকা উচিত নয়। রাজনীতিতে এই অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন, তা না হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্ভব নয়।

সেই সঙ্গে সরকারের ভর্তুকি কাঠামো যৌক্তিকীকরণের পক্ষে মত দেন বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, জিডিপির দুই শতাংশের মতো চলে যাচ্ছে ভর্তুকিতে, যার বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয়। কৃষি, সার ও সামাজিক নিরাপত্তায় ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু বেসরকারি খাতে ভর্তুকি দেওয়ার অর্থ হয় না।

আজ সোমবার বিআইডিএস আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪-এর চারটি বড় চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিনায়ক সেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।

মূল প্রবন্ধে সাদিক আহমেদ আগামী অর্থবছরের চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে যেগুলো চিহ্নিত করেন, সেগুলো হচ্ছে—১. সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ২. রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ, ৩. বাজেট ভর্তুকি বিচক্ষণভাবে অর্থায়ন ও ৪. সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় বজায় রাখা।

তিনি মনে করেন, এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি ছিল সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। কিন্তু সরকার তা না করে বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের যে প্রাক্কলন সরকার করেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।

এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত এক বছরে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে। এই মূল্যস্ফীতির দায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সুবিধাজনক, কিন্তু সেটা ঠিক বাস্তবসম্মত নয় বলেও মনে করেন সাদিক আহমেদ।

তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ আছে ঠিক–ই, কিন্তু দেশের বাজারে যথাযথভাবে চাহিদা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যেসব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাহিদা হ্রাসের ব্যবস্থা নিয়েছে, সেসব দেশ প্রণিধানযোগ্যভাবে মূল্যস্ফীতি হ্রাস করতে পেরেছে। অর্থাৎ যেসব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, সেসব দেশ ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার কমাতে পেরেছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে থাইল্যান্ডের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪৬ শতাংশ কমেছে। ভারতে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কমার হার ৪০ শতাংশ। ভিয়েতনামের মূল্যস্ফীতি সব সময়ই ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে ছিল।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে বিনায়ক সেন মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে উপস্থিত গবেষক ও অর্থনীতিবিদদের মতামত জানতে চান। এ বিষয়ে তাঁদের মত, গত এক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এখন মুদ্রার একক ও বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ করার সময় এসেছে। কারণ, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে। এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলার। আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস কমানো যাচ্ছে না।

বিনায়ক সেন আরও বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে আসছে, কিন্তু তার সঙ্গে দেশের বাজারে দামের সমন্বয় হচ্ছে না। এটা টেকসই নয়, উচিতও নয়।
সেমিনার মিশ্র পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ অনেকে সশরীর এতে অংশ নেন, অনেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশ নেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.