ওলামা লীগ নিয়ে ফের বিতর্ক

0
91
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ

আওয়ামী ওলামা লীগ নিয়ে ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা সংগঠনটির সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে মুখোমুখি দু’পক্ষ। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে চলছে নানামুখী তৎপরতা। এক পক্ষ ‘রাতের আঁধারে ফেসবুকের মাধ্যমে বিতর্কিতদের নিয়ে নতুন কমিটি’ ঘোষণার অভিযোগ তুলে মাঠে নেমেছে। অন্যপক্ষ নিজেদের প্রকৃত ওলামা লীগ এবং আওয়ামী লীগের আদর্শের অনুসারী বলে দাবি করছে। এ পরিস্থিতিতে সংগঠনটির কর্মকাণ্ড নিয়ে আবারও বিব্রত হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

১৯৯৬ সালে নবরূপে প্রতিষ্ঠিত ওলামা লীগের প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ মে। সংগঠনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার কথা জানানো হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর ও অনুমোদনে ঘোষিত নতুন কমিটিতে মাওলানা কে এম আবদুল মমিন সিরাজীকে সভাপতি, হাফেজ মাওলানা সাগর আহমেদ শাহীনকে কার্যকরী সভাপতি এবং আমিনুল হককে (তাবলিগ জামাত) সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব থাকলেও মাত্র ২৮টি পদের নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ২০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের চারজনের নাম ঘোষণা করা হয়।

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে কমিটি ঘোষণার পরই নতুন বিতর্ক দেখা দেয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হকের ‘অশালীন ভিডিও’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। আবার সংগঠনের বিক্ষুব্ধ অংশটি নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ‘কমিটিতে অনেক বিতর্কিত লোক রয়েছেন’ দাবি করে গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। এ সময় বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কমিটি বাতিলের জন্য আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের প্রতি দাবি জানানো হয়।

এর আগে শুক্রবার এক বিবৃতিতে কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ তোলেন বিক্ষুব্ধ অংশটির নেতারা। ৭১ নেতার ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে নতুন কমিটির ১৬ জনের নামও রয়েছে। এতে দাবি করা হয়, বিতর্কিতদের পদায়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ওলামা লীগের ব্যানারে রাজনীতি করে আসা নেতাদের নতুন কমিটিতে কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।

বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত ওলামা লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক আগে থেকেই বিতর্ক চলে আসছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনটির অবিতর্কিত অংশগুলোকে এক করে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ওলামা লীগ নেতাদের একাধিক আলোচনার পর সম্মেলন হয়। সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে সংগঠনটিকে দলের সহযোগী কিংবা সমমনা সংগঠনের স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলেও আলোচনা ছিল। তবে সম্মেলন অনুষ্ঠানেই ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দেন– এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেবেন। তিনি বলেন, ওলামা লীগকে স্বীকৃতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তাদের সহযোগী সংগঠন করা হবে, নাকি সমমনা সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, সেটা ঠিক করবেন শেখ হাসিনা। সম্মেলন মঞ্চেই ওলামা লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে নির্বাচন সামনে রেখে সুশৃঙ্খলভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন সতর্কবার্তার এক মাস না পেরোতেই আবার একই ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল ওলামা লীগ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৬৯ সালে ‘আওয়ামী ওলামা পার্টি’ গঠিত হয়। তখন এর নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দলটির নামকরণ হয় ‘আওয়ামী ওলামা লীগ’। সে সময় সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন মাওলানা হাবিবুল্লাহ কাঁচপুরী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নেতৃত্বের কোন্দল ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েন ওলামা লীগ নেতারা। এ নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে প্রকাশ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটে। এরই মধ্যে একটি অংশ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি, নারীশিক্ষা ও নারীনীতি নিয়ে নানা উস্কানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়। এই অংশটি এমনকি নারীশিক্ষা ও পহেলা বৈশাখকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো রকম সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়।

জানতে চাইলে ওলামা লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মাওলানা কে এম আবদুল মমিন সিরাজী বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুমতি নিয়েই নতুন কমিটি হয়েছে। যাঁরা আমাদের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলব, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সবকিছু যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করেই আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ নিয়ে যাঁরা বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের ভিডিও যাঁরা বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বিক্ষুব্ধ অংশের নেতা হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান মিজানী বলেন, এই কমিটি পুরোপুরি অবৈধ। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে এটি করা হয়নি। আবার সংগঠনের প্যাডেও সেটি প্রকাশ করা হয়নি। একটি অশুভ চক্র আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে বিতর্কিত করার জন্যই রাতের অন্ধকারে ফেসবুকের মাধ্যমে এ কমিটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রাজপথে নির্যাতিত নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই এই অবৈধ কমিটি মেনে নিতে পারছেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.