এক–দেড় মাসের মধ্যে আমাকেও যেতে হবে ভেতরে: মির্জা ফখরুল

0
103
আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে, ছবি: সংগৃহীত

ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মামলায় জড়িয়ে কারাগারে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচার মিলছে না। অনেকের মতো তাঁর মামলার বিচার শুরু হয়ে গেছে। এক–দেড় মাসের মধ্যে তাঁকেও কারাগারে নেওয়া হতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার গুণী মানুষদের ন্যূনতম সম্মান করতে জানে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপমান করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, শত্রুতার কারণে ড. ইউনূসকে মামলায় জড়িয়ে কারাগারে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

নিজের মামলার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার মামলার বিচার শুরু হয়েছে। আমার ধারণা, এক–দেড় মাসের মধ্যে আমানের (আমানউল্লাহ আমান) মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে (কারাগারে)। তাদের উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার। যারা এ সরকারের বিরোধিতা করছে, এ সরকারের পক্ষে নয়, যারা এই সরকারকে বিদায়ের কথা বলছে, তাদের সবাইকে তারা কারাগারে ঢোকাতে চায়।’

সরকার তালিকা করে দ্রুত মামলার রায় দেওয়ার পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে চারজনের একটা সেল তৈরি করা হয়েছে। সেই সেলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন সে মামলাগুলো চিহ্নিত করে। তাদের (সরকার) ভাষায় চাঞ্চল্যকর ও রাষ্ট্রবিরোধী মামলা, সেগুলো যেন অতি দ্রুত রায় দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশ একটি যুগসন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। এ জাতি টিকবে কি টিকবে না—এটাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকবে কি না, তা আজ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
‘প্রতিদিন আদালতের বারান্দায়’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় ঘুরছে। বর্তমান বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচার মিলছে না। দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী বলেন, গণতন্ত্র আছে। আমি তাদের বলব, একবার আপনারা নিম্ন আদালতে গিয়ে দেখে আসুন।’

সরকারের এত অপকর্ম, দুর্নীতির কারণে ভয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ১০টি আসনও পাবে না জেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মানছে না আওয়ামী লীগ।

সাহস নিয়ে রাজপথে নামার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ফখরুল বলেন, ‘সরকারকে সরাতে হলে বুকে অনেক সাহস নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। মৃত্যু, জেলের পরোয়া করলে চলবে না। আজ সবাই মিলে নেমে পড়ুন সরকার পালাবার পথ পাবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, নব্বইয়ের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে। এর ফলে ’৯১–এ সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন চায়। কারণ, এটি ছাড়া সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে দলীয় সরকার, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, এটি প্রতিষ্ঠিত।

এর আগে মির্জা ফখরুল ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান রচিত ‘নব্বই এর গণ-অভ্যুত্থান ও কিছু কথা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারা এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা খায়রুল কবির, জাহির উদ্দিন স্বপন, নাজিমউদ্দিন আলম প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.