এক দফা দাবি আদায়ে সোমবার বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি

0
88
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরছবি: বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সৌজন্যে পাওয়া

সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ওই দিন এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি জানানো হবে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলামগীর।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এক দফা দাবিতে তরুণ যারা আছে, যারা ভোট দিতে পারে না, তারা একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ ঘোষণা করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি ১৮ সেপ্টেম্বর জানাব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে দেশের মানুষকে নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনে সবাই এক হয়ে আছে। সবাই একমত, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সংসদে আছে, জাতীয় পার্টির নেতারাও বলেছেন এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং আমরা এক দফা দাবিতে আবারও কর্মসূচি দিব। ১৮ তারিখে ঘোষণা করব।’

বিএনপির কর্মসূচির আগে চলতি মাসের ১৬ তারিখে রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ এবং আর ১৭ তারিখে বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।

‘গুমের তথ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরায় আদিলুরকে কারাদণ্ড’

গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার থাকার কারণে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে (বাংলাদেশে) গুম করে দেওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটনের ব্যাপারে তিনি (আদিলুর রহমান খান) ছিলেন সোচ্চার। এই বিষয়গুলো তিনি সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরেছেন হিউম্যান রাইটস কমিশনে ও আন্তর্জতিক সংস্থাগুলোতে। যে কারণেই আজ তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এতেই প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন পুরোপুরিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। দলীয়করণ হয়ে গেছে। যার ফলে আজ কোনো মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। তারা ন্যায়বিচারবঞ্চিত। বিচার বিভাগকে দলীয়করণমুক্ত করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় শুধু গণতন্ত্র নয়, দেশের অস্থিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হেফাজতের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে নিহত করেছিল। সেই বিষয়ে প্রতিবেদন করার জন্য এবং সেই বিষয়ে সত্য তুলে ধরার জন্য ওনাদের (অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে) টার্গেট করা হয়। প্রথমে মামলা করা হয় এবং পরে অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করা হয় বলেও অভিযোগ ফখরুলের।

‘গায়েবি মামলায় সাত দিন পরপর হাজিরা দিতে হচ্ছে’

আগের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আগের মতো গ্রেপ্তারও শুরু হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জামালপুরে ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। জামালপুরের মামলায় এখন এমন অবস্থা হয়েছে, হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করছেন। নিম্ন আদালত কী করছেন, সাত দিন পরপর হাজিরা দেওয়ার তারিখ দিচ্ছেন। একই ঘটনা ঢাকাতেও। এমন কোনো থানা নেই, যেখানে সাধারণ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। কয়েক বছর ধরে নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। এটাকে আপনারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট বলবেন?’

‘দুঃখ হয়, উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করছেন। আমাদের মিডিয়ার একটা বড় অংশ এটাকে ডিফাইন করে। আশ্চর্য হই, বিস্মিত হই, দুঃখিত হই, লজ্জিত হই।’

নির্বাচনসংক্রান্ত ৫০ মামলার খবর নেই

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে দলীয়করণ করে ফেলেছে। তিনি বলেন, এখনো ৫০টি মামলা হাইকোর্টে আছে। যেগুলোর বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। এসব নির্বাচনসংক্রান্ত মামলা। ২০১৮ সালের নির্বাচনসংক্রান্ত মামলার ফলাফল আদেশ হাইকোর্ট দেননি।

প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? গোটা ব্যবস্থাটা হচ্ছে একটা দলকে নির্বাচিত করা, একটা দলকেই সমস্ত সুব্যবস্থা করে দেওয়া—যাতে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সামনের নির্বাচনে তারা আসছে। এই নির্বাচনে তখনই যাওয়া সম্ভব হবে, যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রশ্ন থেকে যায়। সে জন্য সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে এক দফা দিয়েছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবারও বলেছেন, তিনি অবাক হচ্ছেন—নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আমরাও তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। কারণ, বাংলাদেশের সব মানুষ জানে নির্বাচন হয় না, ভোট হয় না। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না। দুটো নির্বাচন ওনাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। একটা হয়েছে ২০১৪ সালে এবং একটা ২০১৮ সালে।’

‘২০১৪ সালে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। আর ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট হয়েছে। তার আগে সিডিউল ঘোষণার পর তারা বিরোধী দলের সব নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি প্রার্থীদেরও গ্রেপ্তার করেছে।’

সব সময় মানুষকে বোকা বানানোর জন্য যা খুশি, সরকার তা–ই করছে, এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আর মিডিয়ার একটা গ্রুপ আছে, যারা সারা দিন ধরে এসব প্রচার করতে থাকে।’ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ ও আবদুস সালাম আজাদ, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.