উত্তরায় তিন পুলিশের নেতৃত্বে ২০০ ভরি সোনা লুট

0
97
সোনা

রাজধানীর উত্তরায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর ২০০ ভরি সোনা লুটের ঘটনায় পুলিশের তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ওই এসআইসহ পুলিশের আরও এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নেতৃত্বে সোনা লুটের ঘটনাটি ঘটেছে।

লুটের এই ঘটনা ঘটে গত ১৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ দত্ত জানান, টঙ্গী বাজারের সোনালী মার্কেটে তাঁর শিল্পী জুয়েলার্স নামে একটি দোকান রয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর দোকানের ২০০ ভরি সোনা (প্রায় দুই কোটি টাকা দাম) তিনি পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে নিয়ে গলিয়ে আনেন। শরীর ভালো না থাকায় সোনাগুলো তিনি উত্তরা এলাকার বাসায় নিয়ে যান। পরদিন ভোরে ওই সোনা নিয়ে তাঁর ভায়রার ছেলে অনিক ঘোষের (২৫) দোকানের উদ্দেশ্যে বের হন। সকাল ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউছুল আজম অ্যাভিনিউয়ের ৫০ নম্বর বাড়ির সামনে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস তাঁর সামনে দাঁড়ায়। মাইক্রো থেকে চারজন নেমে ডিবি পরিচয়ে অনিককে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নেন। পরে তাঁর কাছ থেকে ২০০ ভরি সোনা ও মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মেট্রোরেলের উত্তরা স্টেশনের কাছে ফেলে যান।

এ ঘটনার তদন্তে নেমে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত একজনের মুঠোফোনের অবস্থান গাজীপুরের শ্রীপুর থানা এলাকায় শনাক্ত করে। পরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ২৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি শ্রীপুর থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এএসআই গিয়াস উদ্দিন স্বীকার করেন যে ঘটনার দিন তিনিই ভুক্তভোগী অনিক ঘোষের হাতে হাতকড়া পরিয়েছিলেন। ডাকাতির সোনা বিক্রির ৩৭ লাখ টাকা তিনি ভাগে পান। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা তিনি খরচ করে ফেলেন। বাকি টাকা তাঁর বাসায় আছে। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ গিয়াসের কুমিল্লার বুড়িচংয়ের গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালায়। তাঁর বাসার আলমারিতে রাখা একটি প্লাস্টিকের বস্তার ভেতর থেকে সোনা বিক্রির ৩৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

এএসআই গিয়াস উদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গিয়াস উদ্দিন ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএসআই গিয়াস উদ্দিনের আইনজীবী এস এম ইমরুল কায়েস বলেন, তাঁর মক্কেল নিরপরাধ। গিয়াস উদ্দিন স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত নন।

সোনা লুটের এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অপর পাঁচজন হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন (লিটন), গোলাম সারোয়ার (৪৯), আনিস মোল্লা (৩০), সুজন চন্দ্র দাস (২৯) ও আমির। এদের মধ্যে আমির ছাড়া বাকি চারজন এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশের তথ্যমতে, রাজবাড়ী জেলায় জাহাঙ্গীর হোসেনের গ্রামের বাড়ি থেকে লুট হওয়া সোনা বিক্রির ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি চাঁদপুর থেকে জব্দ করা হয়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর মুগদা থেকে গোলাম সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ভুক্তভোগী অনিক ঘোষের মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। গোলাম সারোয়ারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে সুজন চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই চক্রে পুলিশের আরও দুই সদস্য ছাড়া আরেক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিমানবন্দর সড়কে আটকে মালামাল লুটে নেওয়ার ঘটনায়ও এই চক্র জড়িত বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে জোরালো চেষ্টা চলছে। দ্রুতই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হয়ে এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধে জড়ালে তাঁদের বাহিনী থেকে বিদায় করা উচিত বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেন, পুলিশসহ তদন্ত সংস্থার কাজই হচ্ছে অপরাধ দমন এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা। কিন্তু পুলিশ সদস্য হয়ে যদি কেউ স্বর্ণ ডাকাতির মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.