প্রায় ২০০ ব্যবসায়ী ও ৫০০ শ্রমিক বেকার। যাও কিছু ইলিশ বাজারে উঠছে, দাম অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি।
নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষে এবার শুরু হয়েছে সাগরে। মাঝে ১৯ দিন মাছ ধরার সুযোগ পেলেও কোথাও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। মাছঘাটগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। যাওবা কিছু ইলিশ নিয়ে জেলেরা ঘাটে ভিড়ছেন, তার দাম আকাশছোঁয়া।
গেল বছর এ সময় প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় শ মণ ইলিশ চাঁদপুরের প্রধান মৎস্য আড়তে বেচাকেনা হতো। এবার ১০-১৫ মণের বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা জানালেন। বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সকাল ৮টায় চাঁদপুর ঘাটে মাত্র একটি বড় ট্রলারে করে প্রায় ১২ মণ ইলিশ নিয়ে একটি ট্রলার ভেড়ে। ওই ট্রলারের জেলে ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা ২১ জন এই ট্রলারটি নিয়ে ১০ দিন আগে সাগরের কাছে ইলিশ ধরতে যাই। অন্যবার ৩ লাখ টাকার মাছ পাই। এবার ২ লাখ টাকার মতো মাছ পেয়েছি। এতে খরচই উঠবে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর মাছঘাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ইলিশশূন্য মাছঘাট। দু-চারজন ব্যবসায়ীকে অল্প কিছু ইলিশ নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল। দাম অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। ক্রেতা নেই বললেই চলে।
বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী মোক্তার মোল্লা বলেন, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে, ২ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে।
এদিকে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা রক্ষা অভিযান শেষে গত ১ মে থেকে মাছ ধরা শুরু হলেও এক মাস ধরে কোথাও ইলিশের দেখা মিলছে না বলে জানালেন জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারি মানিক। তাঁর দাবি, ইলিশের সংকট দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ জন্য চাঁদপুরের ইলিশ ব্যবসায়ীরা হতাশ। তিনি আরও বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের হাট চাঁদপুর মাছঘাট। অভিযানের পর এক মাস ধরে আমরা অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোনো ইলিশ আসছে না। এ কারণে আমাদের প্রায় দুই শ ব্যবসায়ী ও পাঁচ শর মতো শ্রমিক বেকার। তাঁর মতে, ইলিশের এ রকম মন্দাভাব এর আগে কমই দেখা গেছে। যেখানে এ সময় প্রতিদিন এই মাছঘাটে প্রায় দুই থেকে তিন শ মণ ইলিশ বেচাকেনা করতেন, এখন সেখানে মাত্র ১০-১৫ মণের বেশি ইলিশ আসছে না।
এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই বলে মন্তব্য করলেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম। তিনি বলেন, ইলিশের জন্য আরও প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে। কারণ, একদিকে প্রাকৃতিক প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে নদীতে পানি নেই। বৃষ্টিপাতও একেবারেই কম। তা ছাড়া এখনো ইলিশের মৌসুম শুরু হয়নি। তবে আগামী ২৩ জুলাইয়ের পর থেকে আবার মাছ ধরতে নামলে জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই বিজ্ঞানী।
আশ্রাফুল আলম আরও বলেন, সরকার ইলিশ সম্পদ রক্ষায় ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা রক্ষায় ৮ মাসের অভিযান, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন ও সুষ্ঠু প্রজনন বাড়াতে গভীর সাগরে ৬৫ দিনের অভিযান, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা-মেঘনায় ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।