ইমিটেশনের গয়না আমদানি করে যেভাবে ক্ষতির মুখে পড়লেন আমদানিকারক

0
97
বেনাপোল বন্দর

ভারত থেকে আমদানি করা ইমিটেশন গয়নার একটি চালান যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের গুদামে ৪৫ দিন আটকে রেখে অতিরিক্ত ১৫ লাখ টাকা শুল্ক আদায় করা হয়েছে। আর অতিরিক্ত এ শুল্ক আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

শুধু তা-ই নয়, ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের (প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১১০ টাকা হিসাবে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা) আমদানি মূল্যের ওই পণ্যের চালান বন্দরের গুদামে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় গুদামভাড়া বাবদ অতিরিক্ত ৯০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে আমদানিকারককে। আবার দীর্ঘদিন গুদামে পড়ে থাকায় পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় দামও কমে গেছে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কোরবানির ঈদের বাজারে বিক্রির জন্য ওই গয়না আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু পণ্যটি ছাড় করতে না পারায় ঈদবাজারে বিক্রি করতে না পেরে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে বলে জানান ঢাকার চকবাজার এলাকার আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে আমদানি করা ইমিটেশন গয়নায় সোনার প্রলেপ থাকলে কেজিতে শুল্কায়ন হবে আট ডলার। আর সোনার প্রলেপ না থাকলে শুল্কায়ন হবে পাঁচ ডলার।

আমদানিকারকের অভিযোগ, আমদানি করা পণ্যে কোনো সোনার প্রলেপ না থাকার পরও ১৫ হাজার কেজি ইমিটেশন গয়নার ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ৬ ডলার করে শুল্ক ধরা হয়েছে। এর ফলে আমদানিকারককে প্রায় ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮৮ টাকা অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়েছে।

আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘ঈদবাজার সামনে রেখে মাসুদ এন্টারপ্রাইজের নামে গত ১১ মে ভারত থেকে ১৯ ধরনের ইমিটেশন গয়না আমদানি করা হয়। যার আমদানিমূল্য ছিল ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। কাস্টম হাউসের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, আমদানি করা ইমিটেশন গয়নার ২০ শতাংশ সোনার প্রলেপ (গোল্ড প্লেটেড) ও ৮০ শতাংশ সাধারণ ইমিটেশন (উইথ আউট গোল্ড প্লেটেড) গয়না ধরে শুল্কায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের পণ্য চালানের ক্ষেত্রে পরীক্ষণ প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্টে দেওয়া হয়।’

এ কারণে কাস্টমসের ওই পরীক্ষণ প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের কাছে আবেদন করেন আমদানিকারক। কমিশনার অনুমোদন দেওয়ার পর ২০টি নমুনা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বস্তু ও ধাতব প্রকৌশল বিভাগে (এমএমই) পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ২০টি নমুনা পরীক্ষা করে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘আমদানি করা নমুনায় কোনো গোল্ড প্লেটেড নেই।’

জানতে চাইলে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘নিয়মনীতি মেনেই ওই পণ্যের শুল্ক আদায় করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ন্যূনতম ভ্যালুয়েশন রুলস মেনেই কেজিতে ৬ ডলার করে শুল্ক আদায় করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে সর্বনিম্ন ৫ ডলার নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সর্বোচ্চ কত ডলার নেওয়া যাবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই।’

আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমদানির সময়েই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ইমিটেশন গয়নায় কোনো সোনার প্রলেপ দেওয়া গয়না নেই। অথচ রাজস্ব কর্মকর্তারা আমদানি করা পণ্যের মধ্যে ৮০ শতাংশ গয়নায় সোনার প্রলেপ রয়েছে বলে তাঁদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কিসের ভিত্তিতে এমন প্রতিবেদন দিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা, প্রশ্ন রাখেন তিনি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.