নানা উপায়ে আমদানি কমানোর প্রভাবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমেছে। তবে আগের ঋণ পরিশোধ, নতুন ঋণ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর্থিক হিসাবের ঘাটতিই এখন ডলার সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের বড় কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ২০২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ কোটি ডলার। আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতির কারণে আমদানি চাপিয়ে রাখার কোনো প্রভাব পড়ছে না বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। আমদানি এত কমানোর পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। ডলার বাজারে চাপ বৃদ্ধির প্রধান কারণ আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি। গত অর্থবছরের আগে পর্যন্ত সাধারণত আর্থিক হিসাবে কখনও ঘাটতি দেখা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী প্রথম দুই মাসে আমদানি ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ কমে ৯৮৬ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরে আমদানি কমে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আমদানি কমার কারণে এবং রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৪৫৮ কোটি ডলার থেকে কমে ১০১ কোটি ডলারে নেমেছে। এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমেছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে জুলাই-আগস্ট সময়ে চলতি হিসাবে ১১১ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে। এ হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৪৬ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল। আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশেষ করে শুল্ক বাড়ানো এবং অনেক পণ্যে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব শর্ত মেনে আমদানি করতে গিয়েও অনেকে ডলার পাচ্ছেন না। আবার ডলার পেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঠিক করে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক দিন ধরে ডলারের দর কৃত্রিমভাবে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায় ধরে রেখেছিল। তবে করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। যে কারণে একলাফে দর অনেক বেড়ে অর্থনীতিকে বাড়তি চাপে ফেলেছে।