আমরা যেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়ে না যাই

0
85
এম হুমায়ুন কবীর

বর্তমান পরিস্থিতিটা আমি দুভাবে দেখব। একটা হলো আমাদের দিক থেকে, আরেকটা হলো বাইরের দিক থেকে।

আমাদের দিক থেকে যদি দেখি, তাহলে বলব আমাদের এখানে নির্বাচন সামনে রেখে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, এটা বোঝাই যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, নির্বাচনপ্রক্রিয়া, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের নিজেদেরই সাংবিধানিক দায় আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা প্রয়োজন।

আমাদের নিজেদেরই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নপ্রক্রিয়াকে টেকসই করতে হলে এই বিষয়গুলো সামগ্রিক অবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আমাদের বিষয়গুলো যখন আমরা সমাধান করতে পারছি না, তখনই বাইরে থেকে লোকজন বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের পরামর্শ দেয়। সেটা আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নও আমাদের সতর্ক করছে। তারা বলছে, তোমাদের এই জায়গাগুলোতে ঘাটতি আছে, তোমাদের মনোযোগী হওয়া দরকার। সেখানে আমরা যথেষ্ট উদ্যোগী হইনি বলেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্র একটা ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। যারা নির্বাচনপ্রক্রিয়া বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবে না, তাদের জন্য এই ভিসা নীতি প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এটাকে নেতিবাচকও বলা যায়, ইতিবাচকও বলা যায়। এই নীতি ঘোষণার পর সব রাজনৈতিক দল কমবেশি এটাকে স্বাগত জানিয়েছে।

চীন আমাদের বন্ধু। তারাও একটি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমাদের জন্য যেটা চিন্তা বা শঙ্কার কারণ সেটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে তাদের নিজস্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। সেটা বৈশ্বিক পর্যায়ে বা আঞ্চলিক পর্যায়েও আছে। কোনো কারণে তারা তাদের সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে আমাদের যেন কোনো উপলক্ষ হিসেবে না পায়, আমরা যেন সে উপলক্ষ না হই, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।

এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেলে দুটি অসুবিধার আশঙ্কা থাকে। একটি হলো, আমরা নীতিগতভাবে আমাদের জাতীয় স্বার্থে সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে কূটনীতি পরিচালনা করি। কেউ যদি আমাদের ‘এই পক্ষে’ বা ‘ওই পক্ষে’ ভাবতে শুরু করে বা আমাদের মাঝখানে রেখে যদি একে অপরের ওপর বাক্যবাণ ছোড়ে, তাতে আমাদের ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দ্বিতীয়ত, আমরা চীনের সঙ্গে সংযুক্ত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও যুক্ত। এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক-স্বার্থ যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে জাতীয় স্বার্থের বিষয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকারের মতো মৌলিক যে বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলছে, এগুলোর প্রতি আমাদের নিজেদেরই অঙ্গীকার ও দায় আছে। সেগুলো যদি আমরা নিজেরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে পারি, তাহলে বাইরের জটিলতাগুলো আমাদের স্পর্শ করবে না।

মনে রাখতে হবে, আমরা চাই বা না চাই, এই অঞ্চলে একধরনের শীতল যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে যত বেশি সংহত থাকব, ততই আমরা সে ঝড় থেকে মুক্ত রেখে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে পারব। কাজেই অভ্যন্তরীণ বিষয়টাতে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া দরকার। আমরা যদি সচেতন না থাকি, চারদিকে যে ঘূর্ণন তৈরি হচ্ছে, সেখানে পড়ে গেলে জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। এখানে কোনো দল বা গোষ্ঠী নয়, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

  • এম হুমায়ুন কবীর: যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.