আচরণবিধি লঙ্ঘনে উদ্বেগ, এবার প্রার্থিতা বাতিলের হুঁশিয়ারি

0
94
নির্বাচন ভবন

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে জরুরি বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গাজীপুরের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলকে সতর্ক করা হয়। এছাড়া নৌকার প্রার্থীকে আজমত উল্লাকেও ‘শেষবারের মতো’ সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়। তাকে দুই দফা সতর্ক করল ইসি।

বৃহস্পতিবারও প্রার্থীর প্রচারে অংশ নেওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব। এ সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, ইসি সচিব জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ অংশ নেন।

ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলকে সতর্ক করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীকে ৭ মে ইসিতে তলব করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ৪ মে বৃহস্পতিবার ফের নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে সভা করেন যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে ব্যাপক তৎপরতার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও প্রতিমন্ত্রীকে সামলাতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিইসি অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলীয় পর্যায়ে তাগাদা এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা চিঠি দেওয়ার পরও ইসির নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে ইসি। এ অবস্থায় জরিমানা, জেল, উভয়দণ্ড এবং সর্বোচ্চ প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো আরেকবার সতর্ক করা হচ্ছে। ছুটির এই দিন সন্ধ্যায় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনার করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের উপস্থিতিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা হয়। সতর্ক করার পরও আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা তো চাওয়া হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রীকেও চিঠি দেওয়া হচ্ছে ইসি সচিবালয় থেকে। এরপরও পুনরাবৃত্তি ঘটলে কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হচ্ছে, ৪ মে প্রতিমন্ত্রী সভা করে মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার পরও মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। বৃহস্পতিবার প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে এ পত্র পাঠানো হচ্ছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আমি এখনও ইসির কোনো চিঠি পাইনি। সিটি করপোরেশন এলাকায় আমি কোনো সভা করিনি আজও। আচরণবিধি লঙ্ঘনও করিনি। আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে আমি বরাবরই সচেতন এবং এ বিষয়ে আমি সব সময় সহযোগিতার করে আসছি। কারও পক্ষে প্রচারে অংশ নেননি বলে দাবি করেন তিনি। রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়ে কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়াই এলাকায় যাওয়া-আসা করেছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

এর আগে নৌকার প্রার্থীকে আগে এক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়। ৪ মে ফের আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি স্মরণ করে দিয়ে আবার চিঠি দেয় কমিশন। এতে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার প্রতিমন্ত্রী সভা করে আপনার পক্ষে ভোট চেয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। এ অবস্থায় ৭ মে এসে কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা বলা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.