১৭ ঘণ্টা পর ফেরি চালু চলছে থেমে থেমে

0
707
বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাঁঠালবাড়ি লঞ্চঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে লঞ্চ।

১৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে ১৮টি ফেরির বিপরীতে থেমে থেমে চলছে মাত্র ৭টি। পদ্মায় ২ নম্বর বিপৎসংকেত থাকায় লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখনো প্রবল স্রোত আর বাতাস থাকায় চাহিদা অনুসারে ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল বুধবার বেলা একটা থেকে ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা। পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় অনেক যাত্রীরা দুর্ভোগ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত কাটিয়েছেন ঘাটে। গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে অনেকেই ঘাটে এসে আবার ফিরে গেছেন। অন্যদিকে, ফেরি চলাচল কম থাকায় ঘাটে আটকা পড়েছে গরুবোঝাই শতাধিক ট্রাক। ঠিক সময়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে না পারায় গরুর ব্যাপারীরা লোকসানের আতঙ্কে রয়েছেন।

পদ্মায় ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় দুই ঘাটেই এক হাজারেরও বেশি যানবাহন আটকা পড়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আমরা সকাল ছয়টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু করেছি। পদ্মায় এখনো প্রবল স্রোত ও বাতাস বইছে। তবে তা গতকালের চেয়ে কম। তাই আমরা ১৮টি ফেরির বিপরীতে ৭টি ফেরি চালাতে সক্ষম হয়েছি। এখনো স্রোত আর বাতাস থাকায় পদ্মায় চ্যানেল ঘুরে শিমুলিয়া যেতে প্রতিটি ফেরির দ্বিগুণ সময় ব্যয় হচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, গতকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। এতে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে পদ্মা নদীর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ফেরি চলাচল সীমিত করা হয়। এরপর বেলা একটার দিকে স্রোতের মাত্রা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়।

পরে আজ সকাল ছয়টা থেকে তিনটি কে-টাইপ, তিনটি রো রো এবং একটি মাঝারি সাইজের ফেরি চলাচল শুরু করেছে। পদ্মায় সব ধরনের নৌযান চলাচলে ২ নম্বর বিপৎসংকেত থাকায় এখনো লঞ্চ ও স্পিডবোট ছাড়া হয়নি। দুই ঘাটেই গরুবোঝাই ট্রাকসহ হাজারো যানবাহন এখনো পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকা পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ির চারটি ঘাটেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ঘাটের চারপাশে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। সকাল থেকে থেমে থেমে কয়েকবার বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই ঘাট এলাকার যাত্রীছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘাটের সংযোগ সড়কগুলোয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো ঘাটে নোঙর করে রাখা রয়েছে।

ঢাকাগামী যাত্রী শিকদার মামুন বলেন, ‘রাতে মাদারীপুর থেকে রওনা দিয়ে ঘাটে গেছি। সারা রাত ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে বসে থাকতে হয়েছে। সকাল সাতটার দিকে দুর্ভোগ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেক কষ্টে ফেরিতে উঠতে পেরেছি।’

নড়াইল থেকে ছেড়ে আসা গরুবোঝাই ট্রাকের ব্যাপারী সাইদুর হক বলেন, ‘বুধবার বিকেল থেকে ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে বসে আছি। রাতে একটি ফেরিও চলে নাই। বৃহস্পতিবার সকালে গরুর ট্রাক নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন পারাপার হতে পারব, তা কেউ বলতে পারছে না। যথাসময় হাট না ধরতে পারলে বড় লোকসান হয়ে যাবে আমাদের।’

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিআইডব্লিউটিএ কাঁঠালবাড়ি লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘গতকাল থেকে পদ্মায় দমকা হাওয়া আর স্রোত থাকায় আমরা লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রেখেছি। আজ সকালেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আমরা একটি লঞ্চও টার্মিনাল থেকে ছাড়িনি। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে নৌযান চলাচলে সতর্ক থাকতে ২ নম্বর বিপৎসংকেত দেখানো হয়েছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.