চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত। চীন এখনো রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের নিন্দা জানায়নি। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার কথা বলে আসছে বেইজিং। সংঘাত বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আসছে তারা।
শনিবার জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই–এর সঙ্গে বৈঠকের পর সিবিএস নিউজের সঙ্গে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্লিঙ্কেন জানান, বৈঠকে রাশিয়াকে চীনের প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমরা চীনা কোম্পানিগুলোকে ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র সরবরাহ করতে দেখেছি। গভীর বিষয় হচ্ছে, এখন আমাদের প্রাপ্ত তথ্যমতে, তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।’
চীনের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কী তথ্য আছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। চীন রাশিয়াকে কী কী দিতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, সে প্রশ্নের জবাবে ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রাথমিকভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়া হতে পারে।
রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী ওয়াগনার গ্রুপকে স্যাটেলাইটে ধারণ করা ইউক্রেনের ছবি সরবরাহের অভিযোগে চীনের একটি কোম্পানির ওপর ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, চীনে বেসরকারি কোম্পানি ও রাষ্ট্রের মধ্যে আদতে কোনো তফাত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীন যদি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে তা ‘আমাদের জন্য এবং আমাদের সম্পর্কে গুরুতর সমস্যা তৈরি করবে।’ চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দাগিরির সন্দেহে চীনের বেলুন গুলি করে নামানোর পর ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সম্পর্কে এমনিতেই খারাপ হয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে দুই পক্ষকেই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিব্রত এবং সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তবে চীন যদি ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক খুবই খারাপ পর্যায়ে যেতে পারে।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আরও বলেছেন, চীন যেভাবে রাশিয়াকে সহায়তা করছে, তাতে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর হয়ে পড়ে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ব্যবসা বাড়ছে। রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লার অন্যতম শীর্ষ বাজার হয়ে উঠেছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম এমনকি ট্যাংকও পাঠাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সামনের মাসগুলোতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের জন্য ইউক্রেনের কী কী লাগবে, তা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে এগোনোর চেষ্টা করছে। প্রায় বছরব্যাপী চলা এই যুদ্ধের সবচেয়ে তীব্র লড়াইগুলোর অন্যতম ক্ষেত্র এই পূর্বাঞ্চল।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল মিউনিখে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীন চুপচাপ বসে থাকেনি আবার আগুনে ঘিও ঢালেনি। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধের অবসান কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে একটি ‘ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করবে বেইজিং, যাতে চীনের অবস্থান উঠে আসবে। সেখানে প্রতিটি দেশের ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলা হবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার পরামর্শ, এই যুদ্ধ বন্ধ করতে আমরা কোন ধরনের উদ্যোগ নিতে পারি, সে বিষয়ে সবাইকে শান্তভাবে চিন্তা শুরু করতে হবে, বিশেষ করে ইউরোপের বন্ধুদের।’ ওয়াং ই বলেন, ‘কিছু শক্তি রয়েছে যারা সমঝোতা আলোচনা সফল হোক বা শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধ হোক, তা চায় না বলেই মনে হয়।’ তবে এর মধ্য দিয়ে কাকে বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের বছরপূর্তিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ‘একটি শান্তি পরিকল্পনা’ তুলে ধরবেন বলে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন। তিনি ইতালিয়ান রেডিওতে বলেছেন, শি চিন পিংয়ের বক্তব্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হবে। সেখানে রাশিয়ার অভিযানের নিন্দা করা হবে না।
মিউনিখে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের গুলি করে চীনের বেলুন ভূপাতিত করা নিয়েও কঠোর কথাবার্তা আদান–প্রদান হয়েছে। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বৈঠকে তিনি উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র কখনো তার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন মেনে নেবে না এবং এ ধরনের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড যেন আর না ঘটে।