চট্টগ্রামে বিশ্বকাপের মহড়া

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান

0
87
সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাগতিক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও আফগানিস্তানের হাসমতউল্লাহ শাহিদী।

বাংলাদেশ সিরিজে পরিষ্কার ফেভারিট কিনা– এ প্রশ্ন হতেই নড়েচড়ে বসেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদী। হাসিমুখে বলেন, ‘আমরাও তো খেলতে এসেছি।’ এই বাক্য থেকে বোঝা গেল, সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ফেভারিট মনে করে না আফগানিস্তান। কিছু পরিসংখ্যান মিশিয়ে হাসমতউল্লাহ বরং বুঝিয়ে দেন, আজ থেকে অনুষ্ঠেয় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।

এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা বোঝা যাবে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর। তবে কথার লড়াইয়ে তামিম ইকবালের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন হাসমতউল্লাহ। খেলার মাঠে যেটা খুব বেশি কাজে দেয় না। বিশেষ করে অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। ২০২২ সালে এই চট্টগ্রামে তা প্রমাণও করে দিয়েছিলেন তামিমরা। আগের বারের চেয়ে এবার আরও প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে সে মানের দল বলা যেতেই পারে। তা হাসমতউল্লাহ না মানলেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে বাংলাদেশ সিরিজের পরিষ্কার ফেভারিট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যারা জয় দিয়ে সিরিজের সূচনা করার অপেক্ষায়। কারণ, এ  সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপেরও মহড়া।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে ভালো দল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সে স্বীকৃতি বিশ্বকাপ সুপার লিগের পারফরম্যান্সেই রয়েছে। তামিমরা ২৪টি ম্যাচ খেলে ১৫টি জিতে ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সুপার লিগে বড় বড় দলকে হারানোর রেকর্ড বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেশে এবং বিদেশে হারিয়েছে। সম্প্রতি ভারত, আয়ারল্যান্ডকে সিরিজ হারনো, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে উজ্জীবিত। আফগানিস্তান সেখানে সুপার লিগের বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছে নিচের সারির দল– জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একটি করে ম্যাচ জিতে ২০টি পয়েন্ট নিতে পেরেছে।

আফগানদের ভাগ্য ভালো ভারত, পাকিস্তান আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে হয়নি। সেদিক থেকে বলাই যায়, বিশ্বকাপ সুপার লিগে সেভাবে পরীক্ষা দিতে হয়নি রশিদ খানদের। এই জায়গায় বাংলাদেশ দারুণ সফল একটি দল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থেকেই খেলতে নামবে আজ। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো দু’দিন আগে বলেই দিয়েছেন, টেস্ট জয়ের ছন্দ নিয়ে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে চান।

বিশ্বকাপ বিবেচনায় এই সিরিজটি খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের কাছে। কারণ উভয় দলই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে সুপার লিগ থেকে। সেদিক থেকে দেখলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সিরিজ এটি। যে সিরিজে দু’দলেরই লক্ষ্য থাকবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়া। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা একটু বেশি প্রযোজ্য। একে তো দেশের মাটিতে খেলা, অন্যদিকে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে।

তামিমের মতে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক দিয়ে গত সিরিজ যেমন ছিল তেমনই থাকবে। কারণ, আফগানিস্তান সাদা বলে অন্যতম শক্ত দল। গত সিরিজ থেকে কোনো কিছু কম আশা করছি না। অবশ্যই সিরিজ জিততে চাইব। গতবারের মতো ২-১ না হয়ে ৩-০ চাইব। তবে জিততে হলে ওদের সঙ্গে সেরা ক্রিকেট খেলেই জিততে হবে। এমন না যে মাঠে নেমেই জিতে যাব। কারণ, ওরা বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণের একটি। এটা ভালো যে বিশ্বকাপের আগে এই তিনটি এবং এশিয়া কাপে একটি মোট চারটি ম্যাচ খেলব। এটা দুই দলের জন্যই দুই দলকে দেখে নেওয়ার ভালো সুযোগ। আমরা যেমন ওদের শক্তি-দুর্বলতা বের করতে চাইব। তেমনি ওরাও আমাদের কী ভালো করছি আর কী করছি না, সেটা দেখবে। বিশ্বকাপের আগে নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নামার আগে ওদের সঙ্গে তিন-চার ম্যাচ খেলা খুব ভালো একটা দিক।’

বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজটি পরীক্ষা-নিরীক্ষারও। সাত নম্বর ব্যাটার বেছে নিতে আফিফ হোসেনের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। পেস বোলিং বিভাগেও লড়াই হবে একাদশে জায়গা করে নিতে। তিন পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ আর মুস্তাফিজুর রহমান খেলতে পারেন। পাঁচ বোলার খেলালে একজন ব্যাটার বেশি খেলবে। কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে গত সিরিজেই চট্টগ্রামে দারুণ একটা ইনিংস খেলে সিরিজ নিশ্চিত করেছিলেন। আফগানিস্তানের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের মোকাবিলায় একজন ব্যাটার বেশি নিয়ে খেলার সম্ভাবনা বেশি।

সেকান্দার আলী, চট্টগ্রাম থেকে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.