মনের সুস্বাস্থ্যের জন্য রুয়েটের আয়োজন

0
90
মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে ভিড় করেছিলেন শিক্ষার্থীরা

সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহননের পথ পেছে নিয়েছেন রুয়েটের দুই শিক্ষার্থী। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বটা তাই ভালোই বোঝে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইপিই ক্লাব। ক্যাম্পাসেই তাই এ বিষয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তারা।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রধান ফটক থেকে একটু এগোতেই দেখা গেল শিক্ষার্থীদের জটলা। কী হচ্ছে, দূর থেকে বোঝার উপায় নেই । কাছে গিয়ে বুঝলাম, জনা পঞ্চাশেক শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করছেন।

চেকলিস্টনির্ভর এই ফরম পূরণ করে নিজেরাই নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কে কত নম্বর পেলেন, পাশের বন্ধুটির কী অবস্থা, এসব নিয়ে চলছিল আলোচনা। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হোক, কথা হোক, সচেতনতা তৈরি হোক—এ উদ্দেশেই ২৪ মে দিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রুয়েট ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) ক্লাব। সহযোগী ছিল মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’।

‘ব্রেকিং দ্য স্টিগমা’—এই ছিল অনুষ্ঠানটির নাম। দিনব্যাপী আয়োজনে বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও কর্মশালা, সরাসরি মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ ছিল। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসহায়তা দিয়েছেন মনের বন্ধুর পেশাদার কাউন্সিলর ও মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসহায়তা দিয়েছেন মনের বন্ধুর পেশাদার কাউন্সিলর ও মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসহায়তা দিয়েছেন মনের বন্ধুর পেশাদার কাউন্সিলর ও মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরাছবি: সংগৃহীত

ফাইরুজ নাওয়ার নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন তিনি। ফাইরুজ বলেন, ‘আমরা যারা প্রকৌশল নিয়ে পড়ি, তাঁদের পড়ালেখার প্রচুর চাপ থাকে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের খুব একটা যত্ন আমরা নিতে পারি না। এ নিয়ে ভাবিও না। সে কারণেই নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে এই আয়োজনে এসেছি।’

ফাইরুজের মতো শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করতেই এ আয়োজন, জানালেন আইপিই ক্লাবের সভাপতি সরকার সুদীপ্ত শেখর। তিনি বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব। শারীরিক অসুস্থতার মতো দৃশ্যমান নয়, এমন সমস্যা বিষয়ে সবারই ধারণা থাকা উচিত। সেই বার্তাই আমরা পৌঁছে দিতে চেয়েছি।’

শিক্ষার্থীরা কোথায় পাবেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রুয়েটের আইপিই বিভাগের প্রধান মোশাররাফ হোসেন বলেন, ‘সময়োপযোগী এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আইপিই ক্লাব ও মনের বন্ধুকে ধন্যবাদ জানাই৷ মানসিক স্বাস্থ্য বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে শতভাগ শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়তো সম্ভব না, তবে সচেতনতার জায়গায় তারা একটু হলেও এগোবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

মনের বন্ধুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ রকম যে কোনো উদ্যোগে আমরা পাশে থাকতে চাই। আমরা এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই যে, যেকোনো মানসিক সমস্যা বা সংকটে নিঃসংকোচে তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। সাহায্য চাওয়ার ও সাহায্য করার অভ্যাস গড়ে উঠলেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে যেতে পারব।’

রুয়েট আইপিই ক্লাবের এই আয়োজনে সহযোগী ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৯টি ক্লাব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.