হাজতখানায় অসুস্থ বারবকে নেওয়া হলো হাসপাতালে

0
144
খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর

ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল চক্রের অর্থপাচার মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর আদালতের হাজতখানায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুরান ঢাকার হাজতখানায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

প্রথমে আদালত চত্বরের পাশে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ পাহারায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আদালতের হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. সাদেকুর সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রুবেল-বরকতের অর্থপাচার মামলার শুনানির দিন আজ। এজন্য সকাল সাড়ে ৯টায় কেরানীগঞ্জ জেলখানা থেকে অন্য আসামিদের সঙ্গে তাকে আদালত চত্বরে আনা হয়। সেখানে তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এস আই মো. সাদেকুর জানান, অসুস্থ হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের ব্লাড পেশার মাপা হয়। পরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

খন্দকার মোহতেশাম হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আলোচিত এই মামলাটির আজ শুনানির কথা রয়েছে। এই মামলার অন্য কয়েকজন আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, অর্থপাচারের এ মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চার্জশিটে ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন নতুনভাবে এ মামলার আসামি হয়েছেন। নতুনভাবে যাঁরা আসামির তালিকায় রয়েছেন, অধিকাংশ রাঘববোয়াল হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

২৩ জুন প্রথম পাতায় ‘নতুন করে তদন্ত, জালে অনেক রাঘববোয়াল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়। ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে গত ২২ জুন চার্জশিট জমা দেন  জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান।

চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন– শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান ফারহান, সাবেক মন্ত্রীর এপিএস এএইচএম ফোয়াদ ও অ্যাডভোকেট সত্যজিৎ মুখার্জী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাইন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মোকররম মিয়া বাবু, ফরিদপুরের পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলী মিনার, তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম ওরফে টাওয়ার শামীম, সাবেক মন্ত্রীর ভাই বাবরের ঘনিষ্ঠ সহচর বিল্লাল হোসেন ওরফে মুরগি বিল্লাল, ফরিদপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায়, ফরিদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা দীপক মজুমদার, ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু, সফিকুল ইসলাম, কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত, জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সভাপতি ও মোটরস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসির, ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ খান, বেলায়েত মোল্লা, আহসান হোসেন খান, যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার চৌধুরী মো. হাসান, রুবেল-বরকতের সহযোগী জাফর ইকবাল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা পারভীন, রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ, আওয়ামী লীগ নেতা সাহেব সরোয়ার, স্থানীয় সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাবু, যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার পাল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট জাহিদ ব্যাপারী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা খলিফা কামাল উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর নাফিজুল ইসলাম তাপস, রুবেল-বরকতের সহযোগী রিয়াজ আহমদ, ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু, মনিরুজ্জামান, মাহফুজুর রহমান, সুমন সাহা, আবদুল জলিল শেখ, রফিক মণ্ডল, আজমল হোসেন খান ওরফে ছোট আজম, ঠিকাদার খন্দকার শাহিন আহমেদ ওরফে পান শাহিন ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান (দোলন)।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলও আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি বরকত, রুবেলসহ অন্যদের স্বীকারোক্তিতে যেসব আসামির নাম উঠে এসেছে, তাঁদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছে সিআইডি। কার হিসাবে কত টাকা লেনদেন, আয়ের উৎস; কত টাকা, কীভাবে পাচার করা হয়েছে, বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে অধিকতর অভিযোগপত্রে। আগামী ৫ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আসামি সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, ফোয়াদ ও বাবর। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা তাঁদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁদের মালিকানাধীন ৫৫টি বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়িও জব্দের আদেশ দেন আদালত। সম্প্রতি রুবেল-বরকতের ২০০ একর জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন সাজ্জাদ ও ইমতিয়াজ। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন তাঁরা। এসি, নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার, পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। এ অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন তাঁরা। প্রথম জীবনে এ দুই ভাই রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এক বিএনপি নেতার ফাইফরমাশ খাটতেন। তখন তাঁদের সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এ দুই ভাই অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেছেন।

বরকত-রুবেল ছাড়া প্রথম দফার অভিযোগপত্রের অন্য আসামিরা হলেন– ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আসিবুর রহমান ফারহান, খন্দকার মোহ্‌তেশাম হোসেন বাবর, এএইচএম ফোয়াদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাইন, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলী মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম। ২০২০ সালের ২৬ জুন রাজধানীর কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এসএম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪ (২) ধারায় এ মামলা করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.