সূর্য সেন হলে চার ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

0
177

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক অছাত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে চার ছাত্রকে স্টাম্প দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রদের অভিযোগ, হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে তাঁদের মারধর করে হলছাড়া করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিয়াম।

ভুক্তভোগী চার ছাত্র হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আল-আমিন ও আরবি বিভাগের একই বর্ষের আশিকুর রহমান। তাঁরা সূর্য সেন হলের ৫৩২ নম্বর কক্ষে থাকেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রদের অভিযোগ, ৫৩২ নম্বর কক্ষে তাঁদের সঙ্গে সুমন আহমেদ নামের একজন অছাত্র থাকেন। তিনি প্রায়ই কক্ষের অন্য ছাত্রদের সঙ্গে তুচ্ছ কারণে দুর্ব্যবহার করেন। ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ বড় ভাই’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া সুমন অন্যদের কক্ষ থেকে বিতাড়িত করার হুমকিও দেন। গত রোববার সুমনের সঙ্গে কক্ষের অন্য ছাত্রদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সুমন তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে কক্ষে নিয়ে এসে রুমমেটদের হুমকি দেন। এর প্রতিকার চেয়ে রুমমেটরা সুমনের বিরুদ্ধে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন তা সিয়াম রহমানকে জানান।

ভুক্তভোগী ছাত্ররা আরও বলেন, গতকাল বেলা তিনটার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম রহমান নিজের কক্ষে (৪৫০ নম্বর) আলম বাদশা, লুৎফুর রহমান, আল-আমিন ও আশিকুর রহমানকে ডেকে পাঠান এবং মারধর করেন। মারধরে সিয়াম রহমানের সহযোগী হিসেবে ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা এ কে এম তৌহিদুজ্জামান, আবদুল আহাদ, মুহাম্মদ তালহা, হামিদ কারজাই ও মাজহারুল ইসলাম। মারধরে আহত আলম, লুৎফুর ও আশিকুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন হলের বাইরে অবস্থান করছেন।

যে কক্ষে (৫৩২ নম্বর) ঘটনার শুরু, সেটি ভুক্তভোগী আলম বাদশার নামে বরাদ্দকৃত। তিনি বলেন, ‘অছাত্র সুমন আহমেদের মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান আমাদের মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর তিনি আমাদের অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় সিয়াম ও তাঁর সহযোগী আহাদ ও হামিদ মিলে আমাদের মুঠোফোন ঘাঁটতে থাকেন। ফেসবুকের বিস্তারিত ঘেঁটে দেখেও তাঁরা সেখানে আপত্তিকর কিছু পাননি। তাঁরা আমাদের চারজনকে তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেন। সিয়াম রহমান আমাদের কিলঘুষি ও থাপ্পড় দেন আর লাথি মারেন। হামিদ আমাদের একজনকে স্টাম্প দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করেন। মারধরে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।’

আলম বাদশা আরও বলেন, ‘সিয়াম রহমান আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সরকারবিরোধী মুচলেকা নেন যে “আমরা বর্তমানে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি কক্ষের বড় ভাইকে অন্যায়ভাবে বের করেছি এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই—ফেসবুকে এমন পোস্ট করেছি। এটা হলের বড় ভাইরা জানার পর হল থেকে বের করে দেন। আমি সজ্ঞানে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি।” মুচলেকা নিয়ে রাত আটটার দিকে তিনি আমাদের ছাড়েন। এর পর থেকে আমরা হলের বাইরে আছি।

এ বিষয়ে সুমন আহমেদ বলেন, ‘গত রোববার আশিকুর রহমান আমার কাছে জানতে চান যে আমি কবে কক্ষ ছেড়ে দেব। আমি বলি যে একটা চাকরির ব্যবস্থা হলে ছেড়ে দেব। পরদিন তাঁরা আমার জিনিসপত্র কক্ষ থেকে বের করে রাখেন এবং আমাকে ফোন করে বলেন যে আপনার জিনিসপত্র কক্ষের বাইরে আছে, আমরা কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের কক্ষে তুলব। তার পরদিন দুপুরে গিয়ে দেখি, আমার সব জিনিস কক্ষের বাইরে। তাঁরা আমাকে কক্ষে পাঁচ মিনিট বসারও সুযোগ দিলেন না। বিষয়টি আমি হল শাখা ছাত্রলীগের ছোট ভাইদের জানালে তাঁরা আমাকে আশ্বস্ত করেন যে আমি হলে থাকতে পারব।’

অভিযোগের বিষয়ে সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান বলেন, ‘৫৩২ নম্বর কক্ষে আলম বাদশাসহ ওই চার ছাত্রের একজন পদ্মা সেতু নিয়ে ট্রল করেছেন। তাঁরা চারজনই কক্ষে বসে সরকারবিরোধী নানা কথাবার্তা বলে থাকেন। ওই কক্ষে অন্য কোনো ছাত্রকে তাঁরা উঠতে দেন না। একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীর (সুমন আহমেদ) জিনিসপত্র কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন। অথচ সুমনই তাঁদের ওই কক্ষে তুলেছিলেন। সুমনকে তাঁরা এ–ও বলেছেন যে “আমরা ছাত্রলীগ করি, আমরা তো এটা করবই; হলে কে থাকবে না থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নেব।”’

সিয়াম আরও বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমার কক্ষে ডেকে তাঁদের এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। তাঁদের কাউকে স্টাম্প দিয়ে মারা হয়নি। কাউকেই তাঁদের গায়ে হাত দেওয়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কথাবার্তার একপর্যায়ে ওই চার ছাত্র আমার কাছে ক্ষমা চাইছিলেন যে “ভাই, আমাদের পুলিশে দিয়েন না, আমরা এমনিই হল ছেড়ে দিচ্ছি।” কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, আমরা তাঁদের বের করে দিয়েছি।’

হল প্রাধ্যক্ষ জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.