সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পেলেন ১০ কোটি টাকা

0
144
বাংলাদেশি জানায়েদ (ডানে) ২০১৮ সালের ওই ঘটনার পর আর চলাফেরা করতে পারেন না। পাশে তাঁর ভাই জাহিদ, ছবি: টুইটার

দুর্ঘটনার পর জানায়েদ সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল এবং আলেক্সান্দ্রা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ৯১ দিন এবং আলেক্সান্দ্রা হাসপাতালে ১৫২ দিন ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, ক্ষতিপূরণ বাবদ জানায়েদ যে অর্থ পাচ্ছেন, তার মধ্য থেকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বিল বাবদ ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৮১ ডলার (১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা) এবং আলেক্সান্দ্রা হাসপাতালের বিল বাবদ ৫৮ হাজার ৮১ ডলার (৬১ লাখ ২৩ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হবে।

আইনি প্রতিষ্ঠান হোহ ল কর্পসের আইনজীবী এন শ্রীনিবাসনের সহায়তায় জানায়েদ সিঙ্গাপুরের হাইকোর্টে চারটি পক্ষকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনেন তিনি। ওই চার পক্ষ হচ্ছে—নিউটেক ইঞ্জিনিয়ারিং; জানায়েদের নিয়োগকর্তা এবং এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের মালিক ফেলিজার্দো পারস জোস, ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত এমসিএসটি এবং অফিস ভবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রণের প্রধান ঠিকাদার জো ইন্টারন্যাশনাল।

ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের চিলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস জানায়েদকে সেখানে পাঠিয়েছিল।

স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মই ব্যবহার করে চিলারের ওপর উঠেছিলেন জানায়েদ।

চিলারের ওপর দাঁড়িয়ে জানায়েদ এক হাতে তাঁর ফোন ধরে রেখেছিলেন এবং অন্য হাত দিয়ে জুম ইন করে খুব কাছ থেকে একটি সুইচের ছবি তুলছিলেন।

চিলারের ওপরে কোনো সুরক্ষা বেষ্টনী ছিল না। জানায়েদও কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা কিংবা বেল্ট ব্যবহার করেননি।

এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের কাজগুলো সাব–কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে জোয়ে ইন্টারন্যাশনাল করে থাকে।

জানায়েদ ওই দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার জন্য বিবাদী পক্ষগুলোর ৭০ শতাংশ দায় পেয়েছেন আদালত। বাকি ৩০ শতাংশ দায় জানায়েদকে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরের হাইকোর্ট এ রায় দেন।

সাব–কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠান এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি আদালত এমসিএসটিকেও ৭০ শতাংশ দায় দেওয়ায় ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপিল করেছিল। তবে ২০২২ সালের জুনে এমসিএসটির করা আপিল আবেদন সিঙ্গাপুরের আপিল আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

জানায়েদকে যে ৩০ শতাংশ দায় দেওয়া হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে তিনিও আপিল করেছিলেন। তবে তাঁর সে আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।

এদিকে সিঙ্গাপুরে জানায়েদের ভাই জাহিদের (৪৩) দায়ের করা পৃথক আরেকটি মামলার কার্যক্রমও চলছে।

জাহিদও বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তিনি ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ইউনাইটেড স্কয়ার মলে স্টারবাকসের একটি শাখায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার সময় ৩ মিটার ওপর থেকে পড়ে পায়ে আঘাত পান।

২০১৯ সালের অক্টোবরে মামলাটি করেন জাহিদ। তাঁর পক্ষেও লড়ছেন আইনজীবী শ্রীনিবাসন। জাহিদ মামলা করেছেন এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের মালিক ফেলিজার্দো পারস জোস, জো ইন্টারন্যাশনাল, স্টারবাকস কফি সিঙ্গাপুর ও ইউওএল প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্টের বিরুদ্ধে।

গত বছরের জুলাইয়ে আদালতের রায়ে বলা হয়, চার পক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার জন্য ৭০ শতাংশ দায়ী তারা। আর বাকি ৩০ শতাংশ দায় জাহিদের নিজের।

এ মামলায় জাহিদ কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, সে বিষয় পরে আদালত রায় দেবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.