সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ফৌজদারি মামলার আসামি হয়ে আইনত পলাতক হওয়ায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন ও একই জেলার সাবেক সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমার পোস্টিংয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিট মামলায় তাদের ওকালতনামা ফেরত দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া সুলতানা পারভীন, সাবেক আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও সাবেক সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমার পোস্টিংয়ের প্রজ্ঞাপন স্থগিতের বিষয়ে করা আবেদন শুনানির জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।
পরে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, আমরা আদালতকে বলেছি, তারা চারজন ফৌজদারি মামলার আসামি। আদালত থেকে তারা জামিন না নেওয়ায় আইনগতভাবে তারা পলাতক বলে বিবেচিত। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে সুলতানা পারভীন ও রিন্টু বিকাশ চাকমার ওকালতনামা আদালত ফেরত দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব আসামিদের পোস্টিংয়ের বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলের লিখিত অনুলিপি রিসিভ করেছেন। এরপরও তাদেরকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে, যা আদালত অবমাননার শামিল। এ বিষয়ে শুনানি হবে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদনও করবো।
২০২০ সালে কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে ওই অনলাইন নিউজ পোর্টালের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে বাড়ি থেকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এরপর তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জেলা প্রশাসনে নিয়ে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। পরে তার কাছে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মধ্যরাতেই জেলা হাজতে পাঠানো হয়।
পরে এ ঘটনা গণমাধ্যমে তুলে ধরা হলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এনডিসি এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যার ধারাবাহিকতায় সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত, এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে নিম্নধাপে নামিয়ে দেওয়া এবং রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও রিন্টু বিকাশ চাকমার বিষয়টির এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তবে অন্যদের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল ডিসি অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়।
তবে এসব পোস্টিংয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। পরে ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এর আগে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনসহ চারজনকে বরখাস্ত না করে একজনকে পোস্টিংয়ের বৈধতা এবং অন্য তিনজনকে পোস্টিং না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। নির্যাতনের শিকার আরিফুল ইসলাম রিগান রিটটি দায়ের করেন।