বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, তিনটি পক্ষই একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে আ স ম ফিরোজ এবং আবদুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) এবং বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েলের পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগ আরেকাংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কর্মসূচির স্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছিলেন সমর্থকেরা। বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হকের পক্ষের সমর্থকেরা বাউফল সরকারি কলেজ মাঠে, আ স ম ফিরোজের পক্ষের সমর্থকেরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ও আবদুল মোতালেবের পক্ষের সমর্থকেরা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হন।
আবদুল মোতালেবের নেতৃত্বে বেলা ১১টার দিকে আনন্দ র্যালি নিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিলেন নেতা–কর্মীরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এতে বাধা দেয়। তখন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আবদুল মোতালেবের কথা–কাটাকাটি হয়। অপর পাশেই লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের সমর্থকেরা। তখন আ স ম ফিরোজ ছাদখোলা একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর আবদুল মোতালেবের সমর্থকেরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা চালান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ধারালো অস্ত্রধারী সমর্থকেরা। তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। থামাতে গিয়ে আহত হন আবদুল মোতালেবের কর্মী রাব্বি (৩০), মো. হাসান (২৬), মো. হাসিব (৩২), মো. খোকা মিয়াসহ (৫০) অন্তত ১০ জন।
এরপর আবদুল মোতালেবের সমর্থকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে ওসি আল মামুন, উপপরিদর্শক (এসআই) এম এ হাসান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. হুমায়ন কবির ও মো. শাহিন, কনস্টেবল মো. আবু রাহাত ও মো. রবিউলসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন।
আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপল্টি ধাওয়া। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি থানার মূল ফটকও আটকে দেওয়া হয়। আহত আবদুল মোতালেবকে বরিশালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর নেতা–কর্মীরা চলে যান। তখনো সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পূর্ব পাশে অবস্থান করছিলেন। এরপর তাঁরা র্যালি নিয়ে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দিকে যেত চাইলে বাধা দেয় পুলিশ।
পরে দুপুর ১২টার দিকে মেয়র জিয়াউল হকের নেতৃত্বে একটি বিশাল র্যালি নিয়ে উপজেলা চত্বরে ঢুকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর আবার মিছিলসহকারে চলে যান জিয়াউল হক ও তাঁর নেতা-কর্মীরা। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে বের করা র্যালিটি বাউফল শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা উচিত ছিল। কিন্তু জাতির জনকের জন্মদিন হওয়ায় তা না করে তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় জানিয়ে ওসি আল মামুন বলেন, ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজ দলের প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত।