সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি রয়েছে লন্ডনে। সেখানে একটি রেস্তোরাঁর মালিকানায়ও রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান। সিলেট সদরের পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুজ্জামান দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে যুক্তরাজ্যে তাঁর এসব সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করেননি। হলফনামায় তিনি যে অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন, তার মধ্যে আছে নগদ ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা, ৪৭ ভরি স্বর্ণ (স্ত্রীর নামে), দুটি টেলিভিশন, একটি ফ্রিজ, দুটি এসি ও আসবাব। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে তিন বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষিজমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট।
হলফনামায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন, বছরে কৃষি থেকে আয় ১ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা এবং বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া হিসেবে আসে ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা।
এর বাইরে দক্ষিণ লন্ডনের হাইগেটের নর্থ হিল রোডে (২ নর্থ হিল) কিপলিং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট নামে একটি রেস্তোরাঁর মালিকানায় রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য সরকারের ল্যান্ড রেজিস্ট্রেশন (ভূমি নিবন্ধন) দপ্তরের তথ্যমতে, রেস্তোরাঁটি যে স্থাপনায় অবস্থিত, তার লিজহোল্ড মালিক কিপলিং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউস থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, এই কোম্পানির দুজন পরিচালকের একজন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং অপরজন ফখরুল ইসলাম। ২০২২ সালের ৩১ মার্চে এই কোম্পানির মোট সম্পদমূল্য ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৫ পাউন্ড।
যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদের বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ না থাকার বিষয়ে জানার জন্য গত শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত আছি। পরে আপনার সঙ্গে আলাপ করব।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একজন বলেন, যুক্তরাজ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাসা এবং যৌথ নামে রেস্টুরেন্ট রয়েছে, এটা সঠিক। তিনি সেখানকার করধারী সম্মানিত একজন। তিনি কেন তাঁর বৈধ সম্পদ লুকাবেন? এটা তো লুকানোর কোনো বিষয় নয়। মূলত হলফনামায় বিদেশের সম্পদ উল্লেখ করার কোনো নিয়মই নেই, তাই স্বাভাবিকভাবে আইনগত কারণেই সেসব দেখানো হয়নি। তবে দেশে থাকা তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হলফনামায় যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদেশে সম্পদের তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করা না–করার বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা আছে, প্রার্থীর সম্পদের হিসাব হলফনামায় দেখাতে হবে। তবে বিদেশের সম্পদ দেখাতে হবে কি না, সেটি স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রার্থীর দেশে–বিদেশে যেখানেই সম্পদ থাকুক, তা হলফনামায় দেখাতে হবে। যদি কোনো তথ্য গোপন করেন এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। তিনি বলেন, সাধারণত নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর হলফনামার তথ্য যাচাই–বাছাই করে না। তবে কেউ চ্যালেঞ্জ করে তথ্য–উপাত্ত দিলে নির্বাচন কমিশন তা খতিয়ে দেখে। এ ধরনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের নজরও আছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে প্রার্থীর সম্পদের তথ্য দেওয়ার কথা বলা আছে। এখানে কোনো বিভাজন নেই। যদি বলা হতো, বাংলাদেশে থাকা সম্পদের তথ্য দিতে হবে, তাহলে ভিন্ন কথা। যেহেতু এমন কিছু বলা নেই, সেহেতু প্রার্থীকে তাঁর নামে দেশে–বিদেশে যেখানে যত সম্পদ আছে, তার তথ্য দিতে হবে। এটাই হবে আইনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা।