নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ করা হয়েছে। সুদের হারে আগে যে সীমা ছিল, তা পুরোপুরি উঠে যায়নি। তবে সুদের হার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। বলা যায়, মুদ্রানীতি বাজারনির্ভর সুদহারের দিকে অগ্রসর হলেও পুরোপুরি বাজারনির্ভর হয়নি। তবে এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলা যায়।
ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারনির্ভর না করার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি থাকতে পারে। যেহেতু বাজারে এখনো অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে, তাই বাজারের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দিলে তারা হয়তো সঠিকভাবে সুদের হার নির্ধারণ করতে পারবে না।
মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখনো এটিকে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। ফলে পুরোপুরি বাজারনির্ভর হলে তাতে বিনিময় হারের আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে। এ জন্য ধীরে ধীরে একক বিনিময় হারের দিকে যাওয়া বাঞ্ছনীয় হবে।
রেপো হার বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ সীমিত করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা সব দেশের মুদ্রানীতিরই একটি অংশ। বিভিন্ন দেশ এ নীতি গ্রহণ করে সফলও হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদ হারকে কাজে লাগানো হয়। এতে ঋণের চাহিদায় লাগাম টানা যায়।
তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশই এভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। তবে বাংলাদেশে রেপো হার ও সুদের হারের মধ্যকার ব্যবস্থাপনা বেশ দুর্বল। ফলে এটা ততটা কার্যকর হয় না। সুদের হার পুরোপুরি বাজারনির্ভর হলে রেপো হারের পরিবর্তন বেশি কাজ করবে।
রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এ দেশে আরেকটি সমস্যা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি করা হয়েছে। রাজস্ব নীতি হয়েছে সম্প্রসারণমূলক, আর মুদ্রানীতিকে করা হয়েছে সংকোচনমূলক।
অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই নীতি একই মুখী হওয়া উচিত ছিল। এর ফলে মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য বা সফলতা কিছুটা হলেও ব্যাহত হবে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ঘোষিত মুদ্রানীতি বাস্তবের সঙ্গে পরিপূর্ণ না হলেও কিছুটা সংগতিপূর্ণ। পাশাপাশি বলা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তগুলো বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মুদ্রানীতিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।