রাজধানীতে ৪ ঘণ্টা ধরে পানির নিচে সড়ক, ব্যাপক ভোগান্তি

0
202
সড়কে কোমরসমান পানি জমে আছে। ফলে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা

কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে থেমে থেমে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আজ শনিবার সকালে কিছুটা বৃষ্টি হলেও দুপুরে সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল। তবে বেলা দুইটা থেকে আকাশ আবার কালো হয়ে আসে। আড়াইটা থেকে আবার মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে তলিয়ে যায় রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার সড়ক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

নর্থ সাউথ রোড, বিকেল সোয়া পাঁচটায়
নর্থ সাউথ রোড, বিকেল সোয়া পাঁচটায়, ছবি: সংগৃহীত

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। তবে বৃষ্টি থামার চার ঘণ্টা পরে রাত আটটার দিকেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ছিল পানির নিচে। এতে বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা ঘরবন্দী হয়ে পড়েন। আর যাঁরা এ সময়ে সড়কে বেরিয়েছেন, তাঁরাও পড়েন বেশ ভোগান্তিতে।

রাত আটটার দিকে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড এলাকার বাসিন্দা আবির হোসেন মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। ব্যবসার কাজে ধানমন্ডির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে ইংলিশ রোড, গুলিস্তান এলাকার নর্থ সাউথ রোড, চানখাঁরপুল মোড়, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকার সড়কে পানি জমে থাকতে দেখেছেন তিনি।

ওই ব্যক্তি রাত আটটার দিকে নিউমার্কেট এলাকার সড়কে জমে থাকা পানির স্থিরচিত্রও পাঠিয়েছেন। ছবিতে দেখা যায়, নিউমার্কেট এলাকার নূরজাহান মার্কেটের সামনের সড়কে অনেক পানি জমে আছে। এ পথে হেঁটেও চলাচলের উপায় নেই। কিছু গাড়ি চলাচল করলেও গতি ছিল খুবই ধীর।

ধানমন্ডি এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রাত পৌনে আটটার দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকার সড়কে অনেক পানি জমে আছে। এতে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকায় বিকেল পাঁচটার দিকে কোমরসমান পানি ছিল। এই পানি নেমে যাওয়ার গতি খুব কম।

পুরান ঢাকার বাংলাদেশ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকা
পুরান ঢাকার বাংলাদেশ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকা, ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডির জিগাতলা, গ্রিন রোড, পুরান ঢাকার বংশাল, আগা সাদেক রোড, আবুল হাসনাত রোডসহ আশপাশের এলাকা, পূর্ব জুরাইন, নয়াপল্টনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন অনেক এলাকার সড়ক থেকে পানি সরতে সময় লাগছে। অথচ দক্ষিণ সিটির মেয়র চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, অতি বৃষ্টি হলেও এই বর্ষায় ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

বৃষ্টি কমে যাওয়ার চার ঘণ্টা পরও কেন সড়ক থেকে পানি সরছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিকভাবে পানি নামতে পারছে না। যেসব পথ হয়ে রাজধানীর পানি নিষ্কাশিত হয়, সেসব পথে পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। এ জন্য সড়ক থেকে পানি সরতে সময় লাগছে।

গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পূর্ব জুরাইন এলাকার বিভিন্ন সড়ক। সড়কগুলো এখনো পানিতে তলিয়ে আছে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা। এখনো কিছু কিছু এলাকায় পানি জমে আছে। আজ বৃষ্টির পর সড়কে পানি আরও বাড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে বাসিন্দারা অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন।

আজ রাত ৯টার দিকে পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানালেন, সেখানকার মেডিকেল রোড, কুসুমবাগ, চেয়ারম্যানবাড়ি, নবীনবাগ, মিষ্টির দোকান ও আশ্রাফ মাস্টার স্কুল এলাকার বিভিন্ন সড়ক এখনো পানিতে তলিয়ে আছে।

নিউমার্কেট এলাকা। রাত আটটা
নিউমার্কেট এলাকা। রাত আটটা, ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোড এলাকায় বসবাস করেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, তাঁর বাসার সামনের সড়কে পানি জমে আছে। সড়কে পানি জমে থাকায় বাসিন্দারা বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রের বরাতে জানা যায়, পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোডসহ এর আশপাশের এলাকায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা খরচ করে সড়ক ও নর্দমার উন্নয়নকাজ করা হয়েছিল। এরপরও এসব এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার এমন ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাননি।

পূর্ব জুরাইন। রাত সোয়া নয়টা
পূর্ব জুরাইন। রাত সোয়া নয়টা, ছবি: সংগৃহীত

এদিকে দুপুরের পর শুরু হওয়া বৃষ্টিতে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, বেগম রোকেয়া সরণি, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ভাষানটেক, কল্যাণপুর, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া, ইব্রাহিমপুর, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বেশ কয়েকটি এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। তবে রাত ৯টার দিকে বেশির ভাগ এলাকার পানি রাস্তা থেকে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বর
মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বর, ছবি: সংগৃহীত

তবে নাখালপাড়ার বায়তুল আতিক জামে মসজিদ এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদের দিন থেকে টানা তিন দিন সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। তাঁদের বাড়ির নিচতলায় কোমর সমান পানি জমে রয়েছে। সড়কে পানি জমে থাকার কারণে তাঁদের বাড়ির পানিও নামছে না। এতে বেশ বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।

সড়ক ও নর্দমার উন্নয়নকাজে দুই সিটি প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। এরপরও কেন জলাবদ্ধতা এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নিয়ে আগে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করতে হবে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না করেই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে। তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও এর সুফল মিলছে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.