মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি চলছে

0
170
হোলি আর্টিজান বেকারি। ৩ জুন ২০১৬

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত রায় দিয়েছেন সাড়ে তিন বছর আগে। এই রায়ের পর বিচারপ্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে এখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি চলছে।

বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত মে মাস থেকে শুনানি শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। সর্বশেষ ১৪ জুন শুনানি হয়। শুনানির এই পর্যায়ে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে। মামলাটি এখন আংশিক শ্রুত হিসেবে রয়েছে।

একনজরে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা

এক নজরে হোলি আর্টিজানে হামলার চিত্র
এক নজরে হোলি আর্টিজানে হামলার চিত্র

বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। নিয়ম হচ্ছে, বিচারিক আদালতে কোনো মামলার রায়ের পর মামলাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিতে হয়, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। হোলি আর্টিজান মামলার ডেথ রেফারেন্স প্রস্তুত হয় ২০১৯ সালে। আর ডেথ রেফারেন্সের শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলায় পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। এর আগে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের করা আপিল ও জেল আপিল একসঙ্গে শুনানির জন্য গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। এর মামলার ক্রম অনুসারে শুনানি শুরু হয়।

হাইকোর্টে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদের সঙ্গে ২৬ জুন কথা বলেছে। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে। আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের পর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবে। সর্বশেষ ১৪ জুন শুনানি হয়। এখন সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ চলছে। ৯ জুলাই আদালত খুলবে। দ্বৈত বেঞ্চের একজন বিচারপতি পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে গেছেন। তিনি দেশে ফেরার পর ২৩ জুলাই শুনানি হতে পারে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। সেখানে তারা কুপিয়ে ও গুলি করে ২০ দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে; যাঁদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। সেই রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে শুরুতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তাও নিহত হন। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন।

ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এসব অভিযানে নিহত হয়েছেন হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ আট জঙ্গি।

হোলি আর্টিজানে হামলায় স্তম্ভিত হয়েছিল পুরো দেশ

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এই হামলার মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করেছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজন, হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত পুলিশ, হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক ও কর্মী, জিম্মি হয়ে পড়া অতিথি এবং যেসব বাড়িতে আস্তানা গেড়ে নৃশংস এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেসব বাড়ির মালিকেরা।

নিভে যাওয়া রবি আলো ছড়াচ্ছে

নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। আর খালাস দেওয়া হয় মিজানুর রহমানকে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা এখন কারাগারে আছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসলাম, হাদিসুর ও মামুনুরের অন্যতম আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম ২৬ জুন বলেন, ‘এখন শুনানিতে মূলত আইনি দিকগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। আমরা চাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক। স্বল্প সময়ের মধ্যে আশা করি এই মামলার শুনানি শেষ হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.