মাদক সমস্যার সমাধান চান সবাই

0
134
১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। গতকাল খুলনার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাস্তুহারা এলাকায়

অতীতের নির্বাচনগুলোতে মাদক নিয়ে একই রকম প্রতিশ্রুতি শুনেছিলেন ভোটাররা। তবে প্রার্থীদের ওয়াদা ফাঁকা বুলি থেকে গেছে।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে খুলনাকে মাদকমুক্ত শহর করার দাবি জোরেশোরে উঠেছে। মেয়র আর কাউন্সিলর প্রার্থীরা ওয়ার্ডগুলোকে মাদকমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে নাম ছিল, এ রকম প্রার্থীরাও একই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অতীতের নির্বাচনগুলোতে মাদক নিয়ে একই রকম প্রতিশ্রুতি শুনেছিলেন ভোটাররা। তবে সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের এসব ওয়াদা ফাঁকা বুলি বলেই মনে হচ্ছে।

মাদকের এক বিশাল জাল দেশজুড়ে বিস্তার করে আছে। খুলনা নগর এর বাইরে নয়। ১২ জুনের সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এরই মধ্যে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে তাঁরা মাদকমুক্ত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রচার-প্রচারণাতে প্রার্থীরা মাদক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানাচ্ছেন। মেয়র পদের অন্য দুই প্রার্থীও মাদক নির্মূলের কথা বলছেন।

আমাদের দেশের রাজনীতিতে সরকারি দলের বাইরে কেউ জিতলেও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি অনেক কিছু করতে পারেন না। তবে সরকারদলীয় কেউ যদি মেয়র হন আর তিনি যদি মনেপ্রাণে চান, তাহলে মাদক সমস্যা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
কুদরত-ই-খুদা, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা

খুলনার সাধারণ ভোটার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রশ্রয় পেয়ে থাকেন। প্রার্থীরা এ ধরনের প্রতিশ্রুতি সব সময় দিয়ে থাকেন। আসলে শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়ানো কঠিন।

নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নতুন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলাকায় প্রার্থীরা মাদক নির্মূলের কথা বলছেন। তবে প্রার্থীদের প্রচারণায় মাদকের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিরা কাজ করছেন। বিষয়টা ভূতের মুখে রাম নামের মতো মনে হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সম্পাদক আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা  বলেন, এসব লোকদেখানো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। এগুলোর কোনো মূল্য নেই। এগুলো একধরনের ‘স্টান্টবাজি’। অতীতেও প্রার্থীরা এ রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক নির্বাচনী ইশতেহারে ৪০ দফা পরিকল্পনা, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি দফা—মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা। ইশতেহারে তিনি বলেছেন, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনাকে মাদকমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, যুব সংগঠন, ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চিকিৎসার মাধ্যমে মাদকসেবীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ থাকবে। পাশাপাশি মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তিনি।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারও কারও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে—ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে এমন বিষয়ে তালুকদার খালেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, মাদকের সঙ্গে কোনো প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতা থাকলে খুলনার মানুষ ওই প্রার্থীকে ভোট দেবেন না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল নির্বাচনী ইশতেহারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গণসংযোগকালে মাদকের বিরুদ্ধে নগরবাসীকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলছেন। মো. আবদুল আউয়াল ইশতেহারে মাদক জোগানদাতাদের চিহ্নিত করে আইনি সহায়তায় তা নির্মূল করা এবং মাদক সেবনকারীদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমানও গতকাল বুধবার তাঁর ঘোষিত ইশতেহারে মাদকবিরোধী খুলনা নগর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন।

বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে নাম ছিল, এ রকম অন্তত ছয় প্রার্থী এবার খুলনা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। তাঁরা সবাই নিজ নিজ ওয়ার্ডের শক্তিশালী প্রার্থী। এ ছাড়া গত দেড় মাসে খুলনা নগরের ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে কম করে ২১টি ওয়ার্ডের সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরে  প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কমবেশি মাদকের সমস্যার কথা জানিয়েছেন ওয়ার্ডের মানুষ। আর কিছু ওয়ার্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যাই মাদক। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলরের লোকজনই এসব নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ রকম দুটি ওয়ার্ড নগরের খালিশপুর এলাকার ১০ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড।

সম্প্রতি অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী তালাত হোসেন বলেন, ‘এর সঙ্গে আমার লোকজন জড়িত, এটা প্রোপাগান্ডা। তবে নির্বাচনের পর সবাইকে নিয়ে একটা বড় সভা করে অনুমতি নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর লিস্ট প্রকাশ করব। এরপর আমি নিজেই অ্যাকশনে নামব।’

কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাঁরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় কিছু করতে পারেন না।

৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, অনেক বড় জায়গা থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। অনেকে মাদকসহ ধরা পড়ে কারাগারে যান, কয়েক দিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার যা তাই। তাঁদের পক্ষে সামাজিক চাপ তৈরি সম্ভব, তবে প্রশাসনের একান্ত সহযোগিতা ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

তবে মেয়র মন থেকে চাইলে মাদক সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা। তিনি বলেন, ‘মাদকের ব্যবহার, ব্যবসা ও চোরাচালানের চেইন ভাঙাটা সহজ নয়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে সরকারি দলের বাইরে কেউ জিতলেও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি অনেক কিছু করতে পারেন না। তবে সরকারদলীয় কেউ যদি মেয়র হন আর তিনি যদি মনেপ্রাণে চান, তাহলে মাদক সমস্যা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.