মাগুরার ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় মশা নিধনে উদ্যোগ নেই, সচেতনতার কথা বলছে প্রশাসন

0
137
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত মঙ্গলবার চারজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন

জুলাইয়ের প্রথম ৬ দিনে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার একটি এলাকায় ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও সেখানে মশা নিধনে উদ্যোগ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তাঁদের এ ধরনের কোনো প্রস্তুতি নেই। আর স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বলছে, সচেতনতামূলক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, জুলাইয়ের প্রথম ৬ দিনে শনাক্ত ২৩ রোগীর বেশির ভাগের বাড়ি পাশাপাশি তিনটি গ্রামে। গ্রামগুলো হচ্ছে—আমলসার ইউনিয়নের রাজাপুর, দূর্গাপুর ও শ্রীপুর সদর ইউনিয়নের তখলপুর। গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন দুজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাঁদের একজনের বাড়ি তখলপুর আর অন্যজনের বাড়ি উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহার দু–এক দিন আগে থেকেই এলাকায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। আমলসার ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর ও দূর্গাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আকতার হোসেন গতকাল বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে রাজাপুর গ্রামের মাঝিপাড়ায়। সেখানে পরিস্থিতি এমন যে প্রায় প্রতিটি ঘরে অন্তত একজন করে জ্বরে আক্রান্ত মানুষ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, ঈদে বাইরের জেলা থেকে লোকজন আসার পরই ডেঙ্গু এলাকায় ছড়িয়েছে।’

শ্রীপুরে পাঁচ দিনে ২১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

পাশের তখলপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়িতেই গত বুধবার একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পাশের গ্রাম থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খবর আসছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

জানতে চাইলে আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘মশা মারতে যে ওষুধ লাগে, সেটা আমাদের কাছে নেই। আমরা উপজেলা পরিষদে জানিয়েছি। তবে তারা জানিয়েছে ওষুধ আসেনি। এখন আমরা মানুষকে সচেতন করছি।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদগুলো প্রয়োজন হলে নিজস্ব তহবিল থেকে মশা মারার ওষুধের ব্যবস্থা করে থাকে, কখনো কখনো উপজেলা পরিষদ থেকে ওষুধ ও ওষুধ ছিটানোর যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। আবার সরকার থেকেও অনেক সময় নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এই মুহূর্তে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের কাছে মশা মারার ওষুধ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘আমরা সামনের বৈঠকে মশা মারার ওষুধের বিষয় নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে ইতিমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মাইকিং করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত জুনে মোট ১৮ জন সন্দেহভাজন রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়, তার মধ্যে ৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে অন্তত দুজন জেলার বাইরে থেকে এলাকায় এসে অসুস্থ হন। তবে ঈদের পর জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১ জুলাই ৩ জনের পরীক্ষা করে ২ জন, ২ জুলাই ১১ জনের মধ্যে ৪, ৩ জুলাই ১৬ জনের মধ্যে ৮, ৪ জুলাই ১৬ জনের মধ্যে ৪, ৫ জুলাই ১৪ জনের মধ্যে ৩ এবং গতকাল (৬ জুলাই) ১১ জনের পরীক্ষা করে ২ জনের ডেঙ্গু পজিটিভ পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গু নিয়ে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর

অবশ্য ভিন্ন চিত্র শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায়। শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সেখানে গত ১৫ দিনে কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি। একই সময় মহম্মদপুরে দুজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সেখানে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। জানুয়ারি থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ২০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে মাগুরার সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান গতকাল মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা যেটা জানতে পেরেছি শ্রীপুরের রাজাপুর থেকে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী আসছে। এর কারণ উদ্‌ঘাটনে চিকিৎসকদের একটি দলকে ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জানাতে বলা হয়েছে। এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান হয়েছে।’

সিভিল সার্জন জানান, এই মুহূর্তে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল মিলে ৬ থেকে ৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। চলতি বছর ডেঙ্গুয় আক্রান্ত হয়ে মাগুরায় এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.