ভোটের ফলাফলের পর সহিংসতার আশঙ্কা আছে

0
171
রানা দাশগুপ্ত
নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের সঙ্গে।
প্রশ্ন:ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় গত নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করেনি—এমন বক্তব্য বিভিন্ন সময় দিয়েছেন আপনারা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ আরেকটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু?

রানা দাশগুপ্ত: ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে করা অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে অন্তত একটা বা দুটি বাস্তবায়ন করবে, এটা আশা করেছিলাম। অঙ্গীকার যাতে আওয়ামী লীগ সরকার পূরণ করে, সে জন্য একদিকে আলোচনা, আরেক দিকে মাঠের আন্দোলন করেছি। একপর্যায়ে বলা হলো, সংখ্যালঘু কমিশন অক্টোবরের মধ্যেই করা হবে। সেটাও করা হলো না। তার মানে ইশতেহারে যা ছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, বরং রীতিমতো হতাশ হয়েছি।

এর মধ্যে নতুন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষিত হলো। প্রতিশ্রুতিগুলো এবার আরও সুস্পষ্ট করা হয়েছে। তবে অঙ্গীকার তো হয়, বাস্তবায়ন হয় না। তারপরও আশা করতে চাই, অন্তত আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ইশতেহারে করা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করবে। প্রত্যাশা করা ছাড়া আমাদের কাছে বিকল্প নেই।

প্রশ্ন:আওয়ামী লীগ ও তার শরিকেরা ভোটে যাচ্ছে। বিএনপি ও তার মিত্ররা ভোট বর্জন করছে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভূমিকা কী হবে?

রানা দাশগুপ্ত: সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নির্বাচনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সংখ্যালঘুবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আমরা ভোট দেব না। যাঁরা অসাম্প্রদায়িক ও সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী নয়, তাঁদেরকে ভোট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে। নির্বাচন নিয়ে এর বাইরে আমাদের আর বক্তব্য নেই।

প্রশ্ন:সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০ জন এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে আপনারা কি সন্তুষ্ট?

রানা দাশগুপ্ত: ৩০০ আসনের মধ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা অন্তত ৬০টি আসন পাওয়ার হকদার। তবে কোনো দল থেকে ২০ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টিকে নেতিবাচক বলতে পারি না। তা ছাড়া মনে হচ্ছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও হয়তো কয়েকজন সংসদ সদস্য হতে পারেন।

প্রশ্ন:জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে–পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা–সংঘর্ষের ঘটনা অতীতে দেখা গেছে। এবারের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা আছে কি না আপনাদের।

রানা দাশগুপ্ত: অতীত অভিজ্ঞতার কারণে নির্বাচন এলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে একধরনের ভয়ভীতি কাজ করে। অবশ্য এবার ভোটের প্রচারে এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়নি। কিন্তু ভোটের প্রচারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। এখন যেসব হামলা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, তা মূলত একই দলের মধ্যে বিরোধের কারণে হচ্ছে। আমরা মনে করি, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না হলে এটা বাড়বে। আর সংঘর্ষের ঘটনা বাড়লে হিন্দু–মুসলিম নির্বিশেষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়ার বিষয়টি সংকুচিত হয়ে যাবে। সরকার যদি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তাহলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটি অংশ অবশ্যই ভোট দেবে।

আরেকটি কথা, এই নির্বাচন অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের মধ্যেই হচ্ছে। ফলে কোনো এলাকায় কোনো প্রার্থী (দলীয় বা স্বতন্ত্র) যদি মনে করেন, তাঁর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুরা ভোট দেবেন, তাহলে সেখানে ওই প্রার্থীর লোকজন বাধা দিতে পারে। এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের জন্য এটি নতুন সংকট। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা–সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। [সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রদীপ সরকার]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.