বাজেটে কোন শিল্প কী সুবিধা পেল

0
194
উড়োজাহাজ ইজারায় করছাড়

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত উড়োজাহাজ ইজারার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে ইজারার ব্যয় কমবে। বাংলাদেশ বিমান ও বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো অনেক সময় উড়োজাহাজ ইজারা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে। উড়োজাহাজের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে

দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার উৎপাদনকারীদের জন্য দুঃসংবাদ। সিলিন্ডার তৈরির দুটি কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) এবং ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশে শুল্ক বাড়বে

বাইসাইকেলের কিছু যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহারকারী বাইসাইকেলের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। অবশ্য এসব যন্ত্রাংশ দেশেও তৈরি হয়। ফলে দেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে বাইসাইকেল উৎপাদন করলে ব্যয় বাড়বে না; বরং দেশীয় উৎপাদনকারীরা সুরক্ষা পাবেন।

আঠায় বাড়তি শুল্ক

আঠা (অ্যাডহেসিড/গ্লু) আমদানিতে ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বিদেশি আঠার দাম বাড়বে। নানা শিল্পপণ্য উৎপাদনে আঠা লাগে। আবার বাসাবাড়িতে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে আঠা কিনতে হয়। সব মিলিয়ে আঠা কিনতে বাড়তি খরচ হতে পারে এবারের বাজেটে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের কারণে।

ইটে বাড়তি ভ্যাট, হাজারে ৫০০ টাকা

ইট দেশে দুভাবে তৈরি হয়। একটি যন্ত্রের সাহায্যে, অন্যটি সনাতন ইটভাটায়। এবারের বাজেটে যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া তৈরি সাধারণ ইটে ভ্যাট (নন-রিফ্লেকটরি বিল্ডিং ব্রিকস) প্রতি হাজারে ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এটা ‘ফেসিংয়ে’ ব্যবহৃত ইটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ফলে ইটের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

সফটওয়্যারের খরচ বাড়বে

সফটওয়্যার ও কাস্টমাইজেশন সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে এই সেবার মূল্য বাড়তে পারে। বিদেশি কিছু সফটওয়্যারের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে হারটি ২৫ শতাংশ। শুল্ক ফাঁকি রোধে হারটি সব ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাটও বসবে।

বিদেশি লিফট ও চলন্ত সিঁড়ির দাম বাড়বে

দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে লিফটের সরঞ্জামের আমদানিশুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদেশি লিফটের দাম অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হবে চলন্ত সিঁড়ি বা এস্কেলেটর আমদানিতে।

গৃহস্থালি সরঞ্জাম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে

ব্লেন্ডার, জুসার, প্রেশার কুকারের মতো গৃহস্থালি সরঞ্জাম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আরও দুই বছর (২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত) বহাল থাকবে। একই সুবিধা পাবে ওয়াশিং মেশিন এবং মাইক্রোওয়েভ ও ইলেকট্রিক ওভেন উৎপাদনকারী কারখানা। দেশীয় কারখানার জন্য এই সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজারেও ছাড়

দেশেই এখন বেশির ভাগ রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার তৈরি হয়। দেশীয় ব্র্যান্ড এই বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আবার বিদেশি ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের কারখানাও দেশে হয়েছে। এসব কারখানার জন্য ভ্যাট ছাড় সুবিধা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। এখনকার মতো ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা থাকবে আরও এক বছর।

ন্যাপকিন ও ডায়াপার কারখানার জন্য সুখবর

দেশে এখন স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার তৈরির বেশ কিছু কারখানা হয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠিত এসব কারখানায় উৎপাদিত ন্যাপকিন ও ডায়াপার বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। এসব কারখানার জন্য কাঁচামাল আমদানিতেও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আরও এক বছর বহাল রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ

তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে কম্পিউটার প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ/ইঙ্কজেট কার্টিজ, কম্পিউটার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুক, নোটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার, কি–বোর্ড, মাউস ইত্যাদি নানা পণ্যের স্থানীয় উৎপাদনে রেয়াতি সুবিধা তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করছাড় সুবিধা থাকবে। ফলে সুফল পাবেন দেশীয় উৎপাদকেরা।

সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামালে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা

দেশে বিদেশি ব্র্যান্ডের সাবান উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। আবার দেশীয় ব্র্যান্ডের সাবানও জনপ্রিয়। সাবান ও শ্যাম্পুর দুটি কাঁচামালে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত যে ভ্যাট রয়েছে, তার অব্যাহতি সুবিধা এক বছর বহাল রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদেশি স্যান্ডউইচ প্যানেলে ছাড় নেই

স্যান্ডউইচ প্যানেল ভবনে ব্যবহার করা হয় তাপ ও শব্দপ্রতিরোধক হিসেবে। পণ্যটি মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে রেয়াতি সুবিধায় মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে আমদানির সুযোগ রয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পণ্যটি কোনো মূলধনি যন্ত্রপাতি নয়। দেশে এটি তৈরি হয়। তাই পণ্যটির আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.