যুক্তরাষ্ট্রের ঋণসীমা বিলে কী আছে, কার লাভ কার ক্ষতি

0
94
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই কক্ষেই ঋণসীমা বৃদ্ধির যে বিলটি পাস হয়ে গেল, এ নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওয়াকিবহাল মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে পর্যাপ্ত অর্থ প্রয়োজন ৫ জুনের মধ্যে তাতে সংকট দেখা দেবে। যদি না এর আগেই বর্তমানের সরকারি ব্যয়ের ৩১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়নের সর্বোচ্চ সীমায় পরিবর্তন না আনা হয়। এ সংকট থেকে উত্তোরণে মূলত ঋণসীমা বিল আনছে বাইডেন প্রশাসন।

বিবিসি জানায়, দুই কক্ষে পাস হয়ে গেছে, এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলটিতে সাক্ষর করলে এটি আইনে পরিণত হবে। বাইডেন এরই মধ্যে জানিয়েছেন তিনি এতে সই করবেন।

বিলটির ক্ষমতাবলে আগামী এক যুগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেড় ট্রিলিয়ন অর্থাৎ দেড় হাজার বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে বলে জানিয়েছে কংগ্রেসের বাজেট অফিস।

সরকারি ব্যয়ে লাগাম, তবে প্রতিরক্ষায় নয়

রিপাবলিকানরা আগামী ১০ বছরের জন্য সরকারের সার্বিক ব্যয়সীমায় লাগাম টেনে ধরতে চেয়েছিলেন। অন্যান্য খাতের বরাদ্দ কাটছাট করে প্রতিরক্ষায় কিছুটা বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।

বিলে প্রতিরক্ষা ব্যতীত সব খাতে আগামী বছরের ব্যয়সীমা এ বছরের সমানুপাতিক রাখার কথা বলা হয়েছে। ২০২৫ সালে গিয়ে এক শতাংশ বাড়াতে পারবে সরকার। তবে ২০২৫ সালের পরে গিয়ে আরও বাড়াতে পারবে, সেক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা টানা হয়নি। ব্যয়সীমায় এই লাগাম টানার আয়োজনের তাৎপর্য এখনও তেমন পরিষ্কার নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এ বছরের প্রতিরক্ষা ব্যয় ৩ শতাংশ বেড়ে ৮৮৬ বিলিয়ন ডলারে ঠেকতে পারে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পক্ষই এতে জয় দাবি করছে। হোয়াইট হাউস বলছে, ব্যয়সীমা নির্ধারণ বা ব্যয়সংকোচনের এই আয়োজন মামুলি, ঠিক অত বড়সড় কিছু নয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চেয়েছিলেন প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়ুক, কিন্তু কট্টর রিপাবলিকানরা চেয়েছিলেন প্রতিরক্ষার ব্যয় যেন আরও বেশি বাড়ে।

কোভিড তহবিলের বেঁচে যাওয়া অর্থের কী হবে

কোভিডের ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ঘোষিত জরুরি অবস্থা মে মাসে শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে এই তহবিলের বেঁচে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যাচ্ছে। রিপাবলিকানরা এমনটিই চেয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের কথা রেখেছেন। ডেমোক্র্যাটদের অনেকে জনস্বাস্থ্যে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ওই তহবিল ফেরতে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।

কোভিড ফান্ডে অব্যবহৃত প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কংগ্রেসের বাজেট অফিস।

সামাজিক খাতের ব্যয়ে হেরফের?

রিপাবলিকানদের দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে, সামাজিক খাতের সুবিধা বন্টনে কড়াকড়ি দরকার। তাদের কথা হচ্ছে, শারীরিকভাবে সক্ষমদের যেন খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে কাজ করতে হয়।

অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা বলে আসছেন, এই খাত আলোচনার টেবিলেই আনার দরকার নেই। অর্থাৎ যা আছে তাই যেন চলে।

ধনী আমেরিকানদের ওপর আরও করারোপ?

আগামী এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনাল রেভেন্যু সার্ভিস (আইআরএস) যাতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইনের মাধ্যমে ধনী আমেরিকানদের ওপর করারোপের বিষয়ে কাজ করতে পারে এজন্য ৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে বিলে। ডেমোক্র্যাটরা এটি চেয়েছিলেন।

রিপাবলিকানরা চেয়েছিলেন, ওই ৮০ বিলিয়ন সরাসরি আইআরএস তহবিলে যাক। তাদের কথা হলো- আমেরিকানদের অডিট করতে একদল এজেন্ট নিয়োগ করা যাবে এ অর্থ দিয়ে। আইআরএস জানিয়েছিল, তারা সিস্টেমের আধুনিকায়ন করতে চায় এই অর্থ দিয়ে। কিন্তু সমঝোতার অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বাইডেন। ৮০ বিলিয়ন থেকে ৩০ বিলিয়ন কমাতে রাজি হয়েছেন। তবে এই ২০ বিলিয়ন অপ্রতিরক্ষামূলক কোনো খাতে ব্যয় করা হবে বলেও উল্লেখ করে দিয়েছেন তিনি।

জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন সহজ হবে

নতুন বিধি মোতাবেক, জীবাশ্ম ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রকল্পের অনুমোদন মিলবে সহজেই। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর জো ম্যানকিন দীর্ঘদিন ধরে এর পক্ষে কথা বলে আসছিলেন।

বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা নোমিয়া ইকবাল জানান, বিলের এই বিষয়টিতে হোয়াইট হাউসের জয়-পরাজয় উভয়টিই ঘটেছে। দুই দলই একমত যে, নতুন জ্বালানি স্থাপনা বসাতে অনেক সময় লেগে যায়। কিন্তু কী ধরণের জ্বালানি স্থাপনা প্রাধান্য পাওয়া উচিত তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

রিপাবলিকানরা আরও আরও গ্যাস পাইপলাইন ও জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প চান। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা চান আরও বেশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রকল্প।

বিলে যেসব বিষয় নেই

শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফ: রিপাবলিকানরা চেয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফের বিষয়টি যেন বাইডেনের পরিকল্পনায় থাকে। কিন্তু তা শেষমেষ জায়গা পায়নি। গ্রীষ্মের শেষে শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধ করতে হয়, করোনা মহামারিতে তা স্থগিত করা হয়, এখনও স্থগিতই আছে। তবে কতদিন পর এটি উঠে যাবে সে সিদ্ধান্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের। বাইডেন প্রশাসন শুধু আদালতের নির্দেশনা মেনে চলবে। এইবারের ঋণসীমা বিলে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

কর বৃদ্ধি: ডেমোক্র্যাটরা ধনী আমেরিকানদের ওপর বাড়তি করারোপের কথা চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু বিলে তার ঠাঁই হয়নি। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাটদের অনেকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, হোয়াইট হাউস ধনী ও ক্ষমতাবান আমেরিকানদের ওপর সঠিকভাবে করারোপ করছে না।

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি: মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যেসব ধারা রয়েছে সেখানকার কয়েকটি তুলে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন রিপাবলিকানরা। কিন্তু তা অধরাই রয়ে গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.