করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট (নীল কমল), কলাগাছী, কাগা দোবেকী—সুন্দরবনের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর কী সুন্দর সুন্দর নাম। বর্তমানে এই আট পর্যটনকেন্দ্রে বছরে প্রায় দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পর্যটকের চাপ কমাতে তাই এ বছর থেকে যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র। আগে খুলনা রেঞ্জের মধ্যে সুন্দরবন ভ্রমণের কোনো সুযোগ ছিল না। তবে এবার সেই সুযোগ মিলেছে। নতুন চারটি কেন্দ্রের দুটিই পড়েছে খুলনা রেঞ্জে।
নতুন চারটি পর্যটনকেন্দ্র হলো সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী; পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা এবং চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক। ২০২১ সালে ওই নতুন চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়, এখনো তা চলমান। তবে এ বছর পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকে কালাবগী ও আন্ধারমানিক কেন্দ্র দুটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে মনে করছে বন বিভাগ। মূলত এক জায়গায় পর্যটকদের প্রবেশ কমিয়ে আনা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বনের অভয়ারণ্য এলাকায় পর্যটকদের চাপ কমিয়ে আনতে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নতুন চারটি পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো গহিন বনের মধ্যে ৩৫০ বছরের পুরোনো মন্দির। খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক এলাকার ওই জায়গা এ বছর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ওই এলাকা ‘বাঘের বাড়ি’ নামেও পরিচিত। সেখানে প্রায়ই বাঘের টাটকা পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। আর যাওয়ার পথেই দেখা মেলে পুরোনো বসতির ধ্বংসাবশেষ। চোখে পড়বে কোনো রকম টিকে থাকা বাড়ির দেয়াল ও ইটের স্তূপ। ওই স্থানে পর্যটক নামার অনুমতি দেয় না বন বিভাগ। তবে শেখেরটেক মন্দির ভ্রমণ করে আসা যাবে।
শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রটিও কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন। ওই স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, কালাবগী কেন্দ্র চালু হওয়ার আগেই গত বছর পর্যটক আসতে শুরু করে। এ বছর মৌসুম শুরু হতেই পর্যটক আসা শুরু করেছে। শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রেও পর্যটকেরা যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে আরও কিছু কাজ চলমান। আগামী দুই মাসের মধ্যেই হয়তো ওই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, নতুন চারটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই দুটি কেন্দ্রে পর্যটক যাওয়া শুরু করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই হয়তো শেখেরটেক ও আলীবান্ধা কেন্দ্র দুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে। নতুন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকেরা গিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। আশা করা যায়, এই কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাঁড়াবে।
শেখ আল এহসান