বাইডেনের আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন মোদি

0
101
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগের দিন আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় যে তিন দেশের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন, বাংলাদেশ তার অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি নিবাসে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। চলতি বছরের শেষে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই হচ্ছে দুই নেতার শেষ বৈঠক।

ওই বৈঠকের পরই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর। কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও তাঁর সঙ্গী হতে পারেন। গান্ধী পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারতের অবদানের কথা হাসিনা বারবার কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আগে নরেন্দ্র মোদি তাঁর সরকারি বাসভবনে বৈঠক করবেন মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রবিন্দ জগন্নাথের সঙ্গে। ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহু যুগের। প্রধানত ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই দ্বীপরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম।

প্রধানমন্ত্রী মোদি যে ৯টি রাষ্ট্রকে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মরিশাস তাদের অন্যতম। বাকি দেশগুলো হচ্ছে স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, মিসর ও নাইজেরিয়া। অন্য অতিথি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আগামীকাল শনিবার মোদি মূল সম্মেলনের ফাঁকে আলাপ করবেন।

দিল্লির সরকারি সূত্রের খবর, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর মোদি তাঁর বাসভবনেই বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর বাইডেনের এটাই প্রথম ভারত সফর। গত জুনে মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও বোঝাপড়ার বিষয়গুলো আরও এগিয়ে নিতে আজ শুক্রবারের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠকে বিশেষ করে প্রতিরক্ষাসম্পর্কিত বিষয়গুলো, যার অন্যতম ভারতে নির্মিত যুদ্ধবিমান ‘তেজস’–এর অত্যাধুনিক জেট ইঞ্জিন যৌথভাবে তৈরি এবং অত্যাধুনিক ড্রোন সরবরাহ। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বেসামরিক ক্ষেত্রে পরমাণু সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত ও অবাধ করতে তোলার প্রচেষ্টাও দুই নেতার মধ্যে আলোচিত হবে।

সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হবে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়, চলবে দেড় ঘণ্টা। বৈঠকে টাকা–রুপিতে লেনদেন সুগম করা, কৃষি খাতে গবেষণা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও রেলপথের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন হবে।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, এর বাইরে মোদি সরকারের সঙ্গে ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে ‘অগ্রগতি ও অসুবিধার বিষয়গুলো’ আলোচনায় উঠে আসতে পারে। বাণিজ্য, শক্তি, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধিসহ যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলো যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে, তা আরও কতটা প্রসারিত হওয়া সম্ভব, দুই নেতা যেমন তা আলোচনা করবেন, তেমনই ভারতের সহযোগিতায় নেপাল–ভুটানের মতো তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুগম করার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা–মোদির এবারের আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে দুই দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সক্রিয়। হাসিনা সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতকে তা কিছুটা চিন্তায় রেখেছে। কারণ, ভারত মনে করে, ‘অনাবশ্যক চাপ’ দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে এই অঞ্চলের ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক সুস্থিতির’ পক্ষে হিতকর নয়।

শীর্ষ সম্মেলনের আসরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আর্জেন্টিনা, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

আগামীকাল শনিবার জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নিতে দিল্লিতে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেও শেখ হাসিনার কথা হবে। পরদিন রোববার সকালের অনুষ্ঠান শেষ করেই তিনি দেশে ফিরবেন। কারণ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ওই দিনই ঢাকা সফরে আসছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.