পর্যবেক্ষণে উদাসীন বাফুফে

সাখাওয়াত হোসেন জয়

0
185
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম।

২০২১ সালের আগস্টে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসসসি) তত্ত্বাবধানে সংস্কারকাজ হচ্ছে। মাঠের ভেতরের বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সঙ্গে অনেকবারই কথা বলেছেন এনএসসির কর্তারা। কিন্তু যখন কাজ শুরু হয়েছিল, তখন তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাফুফের কর্তাদের ফোন দিয়েও মাঠে আনা যায়নি বলে জানান স্টেডিয়াম সংস্কারকাজের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা।

বিশেষ করে মাঠে ফিল্টারিং ব্যবস্থা, ঘাস বসানো, গ্রাউন্ডের ড্রেসিংরুমে চেয়ার বসানো ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সংস্কারকাজে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। কাজ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফুটবল ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন দিলেও তাতে সায় মেলেনি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা, ‘মাঠের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে আমি ব্যক্তিগতভাবে আবু নাঈম সোহাগ, জাবের বিন আনসারীকে ফোন দিয়েছিলাম। লোক পাঠাচ্ছি বলে বলেও তাঁরা কাউকে পাঠাননি। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, ফুটবল ফেডারেশন চায়নি এটা ভালো একটা মাঠ হোক। তাহলে কেন এত উদাসীন থাকবে তারা।’

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামটি শুধু ফুটবলের জন্য চেয়েছিল বাফুফে। কিন্তু অ্যাথলেটিকসের জন্য ভালো আলাদা কোনো ট্র্যাক না থাকায় সেটা পায়নি তারা। অনেক সময় অ্যাথলেটিকসের কোনো ইভেন্ট থাকলে লিগের খেলা বন্ধ রাখতে হয়েছিল দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে। এসব কারণেই মাঠটি নিজেরা এককভাবে নিতে চেয়েছিল তারা।

এসব কারণেও সংস্কারকাজে ফেডারেশন কর্তাদের অনীহা ছিল বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা, ‘তারা বিভিন্ন সময় বলত, এই মাঠ অ্যাথলেটিকসের জন্য। এখানে আমরা একা এসে কী করব।’ তারপরও সংস্কারকাজের শুরুতে বাফুফে থেকে ভাড়া করা একজন প্রতিনিধি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টেডিয়ামে থাকতেন। তাঁর চোখেও ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে গাফিলতি ধরা পড়েছিল। সে কথাগুলো ফেডারেশন কর্তাদের জানানোর পর তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বাস্তবে সংস্কারকাজের প্রতি তাঁদের ছিল অনীহা।

অনেক সময় এনএনসির সঙ্গে মতবিরোধও হয়েছিল বাফুফে কর্তাদের। বিশেষ করে মাঠে ঘাস বসানোর সময় একে অপরকে দোষারোপ করেছে। বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর ও পল্টনের আশপাশে জায়গা থেকে তুলে এনেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘাস বসানো হয়েছে। আর এসব বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বর্তমানে মাঠে যে ঘাস বসানো হয়েছে, তা নিম্নমানের।

গলফ কোর্সের ঘাস কিংবা বারমুডা ঘাস বসাতে এনএনসিকে জানিয়েছে বাফুফে গ্রাউন্ডস কমিটি। ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ। যতটুকু কাজ হয়েছে, তাতে শুধু অর্থই ব্যয় হয়েছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। বিশেষ করে মাঠের ফিল্টারিং ব্যবস্থা নিয়ে খুব আপত্তি ছিল তাঁর। পাথর বসালে দ্রুতই পানি নিষ্কাশন হতো; কিন্তু এখন ওপর দিয়ে পানি দ্রুত বের হলেও নিচ দিয়ে আটকে যাবে। যে কারণে বর্ষার দিনে মাঠ শুকাতে সময়ও লাগবে বেশি।

তাঁর মতে, চার থেকে পাঁচ বছর পর দেখা যাবে মাঠ থেকে ঠিকমতো পানি বের হচ্ছে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের একটি মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। সে সময় ইঞ্জিনিয়ারের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তাঁর মতে, শুধু অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকই বসেছে মানসম্মত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.