বনে পাকা ঘর নির্মাণ হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

0
107
চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে নির্মাণাধীন পাকা ঘর

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যথেচ্ছভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা দোকানঘর। সংরক্ষিত বনের ভেতরে এভাবে পাকা ঘর নির্মাণ করায় হুমকির মুখে পড়েছে বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

জানা গেছে, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান দেশের ১০টি  সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্যতম এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। এই বনে ১৯৭ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। ২৪ হাজার ২৮২ হেক্টর আয়তনের এ উদ্যানে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখির বসবাস। এ ছাড়া লজ্জবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ প্রভৃতির বসবাস। এসবের মধ্যে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার (পানি প্রবাহের জন্য বড় খাল) পাশেই বিশাল দুটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরাতন মহাসড়কের পাশে জাতীয় উদ্যানের জায়গা দখল করে কাঠ ও টিনের দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। উদ্যানের মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের পাশেই  নির্মাণ করা হচ্ছে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পাকা দোকানঘরসহ দুটি দোকানঘর

পাকা দোকানঘর দুটি নির্মাণ করছেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লির আকাশ দেববর্মা ও মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ। জানতে চাইলে আকাশ দেববর্মা ও মাসুম বিল্লাহ জানান, বন বিভাগ ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) অনুমতি নিয়ে তাঁরা জাতীয় উদ্যানে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বনভূমি রক্ষায় সরকার বন জবরদখল ও  পাকা দোকানঘর নির্মাণসহ বনের ক্ষতিসাধনকারী ব্যক্তিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করার নিয়ম করেছে। বনের জায়গা দখল করে পাকা দোকানঘরসহ অনেক অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে, যা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা আল-আমিন জানান, উদ্যানে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ বন বিভাগ আপাতত বন্ধ রেখেছে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামসুন্নাহার চৌধুরী বলেন, উদ্যানে আসা পর্যটকদের খাওয়া ও বসার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁরা নিয়ম মতো স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। নিয়ম ভেঙে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।  অবৈধ হলে সংরক্ষিত বনে নির্মাণকাজ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি এখানে নতুন যোগদান করেছেন। পাকা ঘর নির্মাণ কাজ তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.