উদ্বোধনের পর গত ১০ মাসে পদ্মা সেতু থেকে ৬৭৪ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সেতু দিয়ে ৪৭ লাখের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। আর গড়ে প্রতিদিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১৫ হাজার ২২৩টি।
গেল বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেদিন সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। তবে ওই দিন রাতেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলে ২৭ জুন ভোর থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সেতু বিভাগ। তবে চলতি বছরের ২০ এপ্রিল থেকে আবার সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
গত বছরের ২৬ জুন থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গত ১০ মাস ৫ দিনে সেতু দিয়ে ৪৭ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে, যা থেকে টোল আদায় করা হয়েছে ৬৭৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৪ হাজার ৬২০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন সেতু থেকে ২ কোটি ১৮ লাখ ২৯ হাজার ২৭০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুতে প্রথম দিনে টোল আদায় ২ কোটি ৯ লাখ
বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করছে। আগে এসব যানবাহন ও যাত্রীরা মাওয়ার শিমুলিয়া, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের জাজিরা নৌপথ ব্যবহার করে ফেরি ও লঞ্চে পদ্মা নদী পাড়ি দিতেন। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ওই ২১ জেলার মানুষের জন্য পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়া বেশ সহজ হয়ে গেছে।
পদ্মা সেতুর টোল আদায় করার জন্য জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ও মুন্সিগঞ্জ প্রান্তের মাওয়ায় দুটি টোলপ্লাজা স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহন টোল পরিশোধ করে সেতুতে ওঠার জন্য জাজিরা প্রান্তে ৮টি টোল বুথ ও মাওয়া প্রান্তে ৭টি টোল বুথ রয়েছে। জাজিরা প্রান্তে টোল দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন ঢাকার দিকে যায়। আর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে ঢাকার দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর দিকে।
গত ১০ মাস ৫ দিনে সেতু দিয়ে ৪৭ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে, যা থেকে টোল আদায় করা হয়েছে ৬৭৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৪ হাজার ৬২০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন সেতু থেকে ২ কোটি ১৮ লাখ ২৯ হাজার ২৭০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর টোল আদায়ের কাজটি যৌথভাবে করছে পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন। তবে তাদের পক্ষে মাঠপর্যায়ে কাজটি করছে বাংলাদেশের টেলিটেল কমিউনিকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল থেকে যে আয় হচ্ছে, তা জমা হচ্ছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠা টেলিটেল কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন বলেন, টোল প্লাজা সার্বক্ষণিক খোলা থাকে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তের ৮টি ও মাওয়া প্রান্তের ৭টি লেন ধরে গাড়ি পদ্মা সেতুতে ওঠে।
পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ে নতুন রেকর্ড
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) লক্ষ্মী কান্ত হালদার বলেন, প্রতি মাসেই পদ্মা সেতুতে যানবাহন পারাপার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে টোল আদায়ও বাড়ছে। টোল আদায়ের কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা ওই কাজ সমন্বয় করেন। টোল আদায়ের টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যমুনা ব্যাংকের মাধ্যমে সেতু কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে জমা করে দিচ্ছেন।