ফোনের রিং বাজতে বাজতে হঠাৎ বিজি টোন পাওয়া গেল। বুঝতে বাকি রইল না, ওপাশ থেকে কলটা কেটে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে নুসরাত ইমরোজ তিশার ফোনে কল করার পরের ঘটনা এটি। কিছুক্ষণ পরই ফিরতি কল। হোয়াটসঅ্যাপে আসা সেই কল থেকে জানা গেল, ফোনটা তিশা কেটে দেননি। তাঁদের পরিবারের নতুন অতিথি ইলহামের হাতে মুঠোফোনটা ছিল, সে–ই কেটে দিয়েছে!
অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দম্পতির কন্যাসন্তান ইলহামের বয়স এখন ১৫ মাস। ইলহামের জন্মের বছর দেড়েক আগে থেকেই অভিনয়–বিরতিতে আছেন তিশা। সব মিলিয়ে অভিনয় থেকে দূরে আছেন তিন বছর। এর মধ্যে ক্যামেরার সামনে এসেছেন কয়েকবার; তবে নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা টেলিছবির কাজে নয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার কাজে। তিশা বললেন, ‘কাজে এখনো সেভাবে ফিরিনি। কিছু বাণিজ্যিক কাজ করছি। তবে অনেক পরিচালক যোগাযোগ করছেন। তা ছাড়া এখনো পুরোপুরি কাজে ফেরার মতো অবস্থা হয়নি। ইলহামের বয়স মাত্র ১৫ মাস। কথা চলছে কিছু প্রোডাকশনের সঙ্গে। কোনোটাই নিশ্চিত করিনি।’
ঈদের আগ মুহূর্তে
কয়েক বছর আগেও ঈদ–পূর্ববর্তী এ সময়ে দম ফেলার ফুরসত থাকত না। আজ এই শুটিং স্পট তো কাল অন্য শুটিং স্পট। এখন দিন বদলেছে। তিশার জীবনে এসেছে ইলহাম। দিনের বড় একটা সময় কন্যার পেছনেই কেটে যায়।
তিন বছর ধরে নতুন কোনো নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন না নসুরাত ইমরোজ তিশা। তারপরও গেল দুই বছর পুরোনো তাঁকে টেলিভিশন নাটকে দেখা গেছে। এবারও কি তেমন সম্ভাবনা আছে নাকি? এমন প্রশ্নে তড়িঘড়ি বললেন, ‘আর কত দিন। তিন বছর ধরে তো কোনো শুটিংই করিনি। এবার আর সে ধরণের সম্ভাবনা নেই।’ অথচ এমন একটা সময় ছিল, যখন ঈদে তিশার ২০–৩০টি নাটক থাকত।
পেছনের মানুষ
ক্যামেরার সামনে কাজ না করলেও ক্যামেরার পেছনে তিশা ঠিকই সক্রিয়। ইলহামকে সামলে নিজেদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছবিয়ালের বিভিন্ন কাজে সময় দিচ্ছেন। বললেন, ‘কাজ করছি না, তাই বলে যে সারাক্ষণ বাসায় থাকা হয় তা–ও কিন্তু না। প্রযোজক হিসেবে ছবিয়ালের প্রোডাকশনগুলো দেখছি।
টুকটাক ব্রেন স্টর্মিংও চলছে।’ তিন বছর কাজ মিস করেছেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘না, একদমই না। আমি ওটা এখন মিস করছি না। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক বছর কাজ করেছি। এখন আমি একটা নতুন জীবনে পা রেখেছি। নতুন জীবনটা গোছাচ্ছি। তারপর আবার কাজে নামব। নতুন জীবন গোছানোর এই প্রক্রিয়াটা আমি বেশ উপভোগ করছি। ইলহামের এ সময়টা যখন আমার কাছ থেকে চলে যাবে, চাইলেও ফেরত পাব না। ইলহামকে সেটেল্ড করে কাজে ফিরি, তবে সুন্দরভাবে সব করতে পারব। আমিও তাই সঠিকভাবে ফিরতে চাই।’
আশাবাদী মানুষ
দুই দশকের বেশি সময় ধরে পেশাদার অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত তিশা। তাঁর সমসাময়িক সবাই অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের একদল অভিনয়শিল্পী এখন নিয়মিত কাজ করছেন। ঈদের মতো উৎসবে নিজের নাটক বা টেলিছবি না থাকলেও অন্য সহকর্মীদের কাজগুলো
দেখা হয় বলে জানালেন তিনি, ‘এখন তো আসলে সবার কাজ টুকটাক চোখে পড়ে। নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলতে পারছি না। তবে কাজ ঠিকই দেখি। নতুন নতুন অনেক পরিচালক এসেছে। নতুন সব কনসেপ্টে কাজ হচ্ছে। অনেক নতুন শিল্পীও এসেছে। কিছু কাজ ভালো হচ্ছে, কিছু কাজ খারাপ—সেটা অবশ্য আগেও ছিল। ভালো কাজ–মন্দ কাজ মিলিয়েই এই অঙ্গন। ওটিটিতে অনেক অসাধারণ কাজ হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে আমরা ভালো কাজ পাব। আমি আশাবাদী মানুষ। সেই আশায় আছি।’
ভক্তদের সঙ্গে যোগ
তিন বছর ধরে নতুন কোনো কাজ উপহার দিতে না পারলেও ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ কিন্তু ঠিকই আছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে চাইলেও এখন আর দূরে থাকা সম্ভব নয়। ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্ট, অল্প বা বড় পরিসর যেটাই হোক—একবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকলে আর বের হওয়া সম্ভব নয়। আমিও বের হতে পারিনি।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের থ্রুতে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে। বিভিন্ন মুহূর্তের খবর তাদের সঙ্গে শেয়ার হচ্ছে। আমার বেবির খবর যেমন তারা জানতে পারছে, তেমনি পরিবারের খবরও তারা জানতে পারছে।’
ঈদে চলচ্চিত্র
নতুন কাজ না করেও কিন্তু ঈদে ছোট পর্দায় থাকছেন তিশা। তবে নাটক, টেলিছবি নিয়ে নয়, চলচ্চিত্র নিয়ে। বড় পর্দায় যাঁরা এখনো ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ দেখেননি, এই ঈদে চ্যানেল আইতে তিশা অভিনীত ছবিটি দেখতে পাবেন তাঁরা।
ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে দেখানো হবে প্রদীপ ঘোষ পরিচালিত ছবিটি। তিশা বললেন, ‘দর্শকের উদ্দেশে একটা কথা বলব, এটা পিরিয়ড সিনেমা। প্রীতিলতাকে নিয়ে আমাদের এখানে ওভাবে কাজ হয়নি। প্রীতিলতার ত্যাগ বা প্রীতিলতাকে জানার জন্য নতুন প্রজন্মকে ছবিটা দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’