বান্দরবান সরকারি কলেজের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ছাত্রীনিবাসের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল দেড় বছরের মধ্যে। এখন পেরিয়ে গেছে আড়াই বছর। এরপরও নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ভবনের কাঠামো দাঁড়ালেও এখনো বাকি বেশ কিছু কাজ।
বান্দরবান শহরের হাসপাতাল এলাকায় অবস্থিত কলেজের প্রশাসনিক ভবনের পাশে একটি পাহাড়ের চূড়ায় পাঁচতলার এই ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৩২ আসনের এই ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে।
২ জুলাই সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রীনিবাসের ভবনের কাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও টাইলস ও পানির পাইপ স্থাপন করা হয়নি। লাগানো হয়নি কক্ষগুলোর দরজা-জানালাও। এ ছাড়া শৌচাগার নির্মাণসহ আরও অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। বাইরে নিরাপত্তাপ্রাচীর নির্মাণ করা হলেও কাঁটাতারের বেড়া শেষ করা হয়নি। নির্মাণাধীন ভবনে কোনো শ্রমিককেও কাজ করতে দেখা যায়নি।
নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণসামগ্রী দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুদর্শন দেব জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া শ্রমিকেরা এখনো ফিরে আসেননি। নির্মাণসামগ্রী সবকিছু মজুত করে রাখা হয়েছে। লোকজন ফিরে এলে কাজ শুরু হবে।
কলেজ সূত্র জানায়, এই ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। কাজ শুরু হয় ওই বছরের ডিসেম্বরে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। ঠিকাদারের কাজের ধীরগতির কারণে আড়াই বছরেও তা শেষ হয়নি।
ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ আর এম ইঞ্জিনিয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদ বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংকট ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে কাজের অগ্রগতি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেননি তিনি।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বান্দরবান কলেজ সরকারি হয় ১৯৮০ সালে। কলেজে এইচএসসি, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ৮ হাজার ৯৭৯ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬ হাজার ৪৬৪ জন ছাত্র। কলেজে প্রায় ১০০ শয্যার একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। ২ হাজার ৫১৫ জন ছাত্রীর মধ্যে অধিকাংশই রুমা, থানচি, আলীকদমসহ বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে জেলা শহরে এসে পড়াশোনা করেন। এ জন্য একটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বান্দরবান সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ সঞ্জীব কুমার চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের বহুদিনের দাবি একটি ছাত্রীনিবাস। দূর থেকে আসা দরিদ্র ছাত্রীদের অনেকের জেলা শহরে থাকার কোনো জায়গা নেই। তাঁদের জন্যই ছাত্রীনিবাস জরুরি। কিন্তু নির্মাণকাজের এত ধীরগতি না হলে ছাত্রীরা আরও আগেই আবাসনসুবিধা পেতেন।
সঞ্জীব কুমার চৌধুরী আরও বলেন, নির্মাণকারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হওয়া ও ঠিকাদারকে কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় গত বছরের ৩০ জুন এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। গত ৩০ জুনে সেই এক বছরের বর্ধিত মেয়াদও শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময় দেওয়া হয়েছে।