সুদহারের পর এবার ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা শুরু করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে এক দিনেই মার্কিন মুদ্রাটির দাম বেড়েছে ২ টাকা ৮৫ পয়সা। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা দরে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। এ নিয়ে গত এক বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাড়িয়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের আলোকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। এতে সরকারের আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত সরকারের সার, জ্বালানি, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারে যাই হোক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরেই ডলার বিক্রি করা হতো। দাম কম থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনা ছিল আকর্ষণীয়। গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠা রিজার্ভ এখন ৩১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এখন থেকে আন্তঃব্যাংক তথা এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ যে দাম উঠবে, ওই দরেই বিক্রি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল আন্তঃব্যাংকে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা। আগের দিন ছিল ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ ১০৬ টাকা নির্ধারণ করেছিল। চলতি বছরের শুরুতেও ব্যাংকটি প্রতি ডলার বিক্রি করত ৯৯ টাকায়। আর গত বছরের ৩ জুলাই প্রতি ডলার ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। যদিও বাজারে এ সময় ১০৮ থেকে ১১৪ টাকায় ডলার কেনাবেচা হয়েছে।
আইএমএফ ঋণের অন্যতম শর্ত হলো ঋণের সুদহার ও ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর সব পর্যায়ে ডলার কেনার এক দর কার্যকর করতে হবে। জুলাই থেকে এক দর কার্যকরের কথা থাকলেও এখন তা আগামী সেপ্টেম্বরে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তখন রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার দর হবে অভিন্ন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে এখন দেখার বিষয় এটি কীভাবে পরিচালনা করা হয়। কেননা, ব্যাংকগুলো যদি বলে আন্তঃব্যাংকে ১০৯ টাকার বেশি দরে বেচাকেনা হবে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি আন্তঃব্যাংকের দরই নেয়, তাহলে তো সেটা বাজারভিত্তিক হলো না। ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলেও এখন তা ১১৪ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকর করা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে ১ জুলাই থেকে নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহারের সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। জুনের ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এতে জুলাইয়ে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ দাঁড়াবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশে। প্রতি মাসেই স্মার্ট রেট ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই আলোকে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সুদহার ঠিক করবে।
অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন কৃষিঋণে স্মার্টের সঙ্গে যোগ করা যাবে ২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ হবে ৯ শতাংশ। আর সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নিতে পারবে। ফলে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ হবে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ক্রেডিট কার্ডে আগের মতোই সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ সুদহারের সীমা বহাল থাকবে।