জুতা কিনতে গিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, বিক্রেতাকে পেটালেন জাবি ছাত্রলীগের দুই নেতা

0
128
দোকানের কর্মচারীকে পেটাচ্ছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। গতকাল বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর বাজারে

ঢাকার সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ইসলামনগর বাজারে এক জুতার দোকানদার ও তাঁর কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ওরফে নাহিদ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ওরফে জয়। তাঁদের মধ্যে সাব্বির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং মেহেদী হাসান সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত।

ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় ইসলামনগর বাজারে জুতা কিনতে দোকানে যান সাব্বির ও মেহেদী। জুতা কেনার পর পালিশ করতে দেরি করেন কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম। এতে সাব্বির উত্তেজিত হয়ে যান এবং দ্রুত পালিশ করার জন্য ধমক দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীর সঙ্গে সাব্বিরের কথা-কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাব্বির ওই কর্মচারীকে মারতে মারতে দোকানের ভেতর থেকে বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসেন। রাস্তায় কয়েক দফায় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানো এবং পা ধরে মাপ চাওয়ানো হয়। এ সময় দোকানমালিকের বড় ভাই সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী নেওয়াজ থামানোর চেষ্টা করলে তাঁকে থাপ্পড় মারেন মেহেদী হাসান।

প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ খান বলেন, ‘জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় আমাদের সামনে কর্মচারীকে মারধর শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে সব আছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষেরা ভুল করতে পারি। তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এভাবে মারবে, এটা মেনে নিতে পারছি না।’

ভুক্তভোগী কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুতা কেনার পর আমাদের দোকানের নিয়ম অনুযায়ী আমি পালিশ করতে থাকি। তাঁরা তাড়াহুড়ো শুরু করলে আমি একটু সময় লাগবে বলে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা আমাকে বেধড়ক কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমি কান ধরে ওঠবস এবং পা ধরে মাফ চাওয়ার পরও আমাকে মারতে থাকে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

ইসলামনগর বাজারের ওই দোকানের মালিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী রোমেন রায়হান। তিনি বলেন, তিনি একটু বাইরে ছিলেন। ঘটনার সময় এসে দেখেন তাঁরা কর্মচারীকে পেটাচ্ছেন। তিনি ক্যাম্পাসের বড় ভাই পরিচয় দেওয়ার পরও তাঁরা মারতে থাকেন। তাঁর বড় ভাইকেও থাপ্পড় দিয়েছেন। এরপর দোকান বন্ধ রাখার জন্য বলে গেছেন। তিনি দোকান খুলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে সাব্বির হোসেন মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা ওই দোকানে জুতা ক্রয় করি ১ হাজার ৩৫০ টাকা দামে। তাঁদের আমরা ১ হাজার ৫০০ টাকা দিই। তাঁরা আমাদের ১৫০ টাকা ফেরত না দিয়ে ৫০ টাকা ফেরত দেন এবং আগে আরও ২০০ টাকা ফেরত দিয়েছে বলে দাবি করেন। আমরা প্রতিবাদ করলে ওই কর্মচারী আমাদের ওপর হামলা করেন।’ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে মারধর করতে দেখা গেছে উল্লেখ করলে সাব্বির বলেন, ‘আমরা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করি, এতে ধস্তাধস্তি হয়। কোনো মারামারি হয়নি।’

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মেহেদী হাসানও। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের ভাঙতি টাকা ফেরত দেয় নাই। জুতা কেনার পর রসিদ না দিয়ে আমাদের ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দেব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় সাভার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দোকানমালিক রোমেন রায়হান।আশুলিয়া থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) সোহেল খন্দকার বলেন, তিনি একটি লিখিত অভিযোগের কথা শুনেছেন। সেটা তদন্তের জন্য তাকে বলা হয়েছে। তিনি থানায় গেলে বুঝতে পারবেন, ওটা অভিযোগ নাকি মামলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.