চুল-দাড়ি কেটে দিয়েছিল, পরে ‘র্যাগিংয়ের নামে খুন’ শিক্ষার্থী
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শেখ সাদিকুর রহমান নামের এক ছাত্রকে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পাঁচ দিন পর আজ সোমবার সকালে তাঁর ভাই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কাপ্তাই থানায় মামলা করেছেন।
নিহত শেখ সাদিকুর রহমান বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির জাহাঙ্গীর ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলার ৫৬ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের পাগলা উপজেলায়।
১৬ জুলাই গুরুতর আহত অবস্থায় শেখ সাদিকুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে জানানো হয়—দোতলার ছাদ থেকে পড়ে সাদিকুর আহত হয়েছেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১৯ জুলাই মৃত্যু হয় সাদিকুরের।
মামলার এজাহারে মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন, মৃত্যুর আগেও একাধিকবার র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাদিকুর। একবার জোরপূর্বক কক্ষে ঢুকে তাঁর চুল ও দাড়ি ফেলে দিয়েছিলেন কয়েকজন ছাত্র। ছাদ থেকে পড়ে সাদিকুরের মৃত্যু হয়েছে দাবি করা হলেও তাঁর বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখমের দাগ ছিল। এ ছাড়া তাঁর দুই পায়ের নখ ও মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাঁর ধারণা—সাদিকুরকে ছাত্রাবাসের সানশেড থেকে ফেলে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁকে চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত এক শিক্ষার্থী খুনে জড়িত রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এজাহারে বলা হয়, ঈদের আগেও সাদিকুরের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। তাঁর পাশের কক্ষেও ভাঙচুর করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাদিকুর নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময়ও তাঁর মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তিনি পরিবারের সদস্যদের বলেন,‘এই তো, আর দেড় বছর কোনোমতে পার করতে পারলেই বাঁচি।’
ঘটনার দিন বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে সাদিকুরের সঙ্গে ভিডিও কলে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় সাদিকুরের মাথার চুল এবড়োখেবড়ো করে কাটা ছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর মা প্রশ্ন করলে সাদিকুর জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এর সোয়া এক ঘণ্টা পর ছাত্রাবাসের প্রভোস্ট ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান।
জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সাদিকুরের ওপর এর আগেও একাধিকবার নির্যাতন করা হয়েছে। ১৬ জুলাইও তাঁর ওপর র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন চালানো হয়েছে। পরে সানশেড থেকে ফেলে দিয়ে খুন করা হয়েছে।’
তাঁর ভাই কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না—জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জেরেই ঈদের আগে সাদিকুরের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আবদুল মতিন হাওলাদার বলেন, র্যাগিং কিংবা হামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। শিক্ষার্থীর পরিবার যেহেতু থানায় মামলা করেছে, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে উদ্ঘাটন করবে।
জানতে চাইলে কাপ্তাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নূরে আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হত্যার অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।