একজন ব্যক্তিকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করার পর তাঁর কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ বা লিভার, অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) ও খাদ্যনালি—এই অঙ্গগুলো অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। আর কার্ডিয়াক ডেথ বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির চোখের কর্নিয়া, অস্থি, অস্থিমজ্জা ও চর্ম প্রতিস্থাপন করা যায়। এসব অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলা হয়।
আজ কিডনি ফাউন্ডেশনের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন, ২০১৮ হয়েছে। দেশে রোগীর জীবিত আত্মীয়ের দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হলেও এখনো ব্রেন ডেথ ঘোষিত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়নি।
এটা খুব শিগগিরই শুরু করতে চায় বিএসএমএমইউ। এতে অনেক মানুষের জীবন বাঁচবে। এখন দেশে অনেক উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার আর প্রয়োজন নেই।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হারুন আর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আর্থিক সংকটে বেশির ভাগ কিডনি রোগী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানের বিষয়ে অনেক মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে।
সেসব দূর করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মৃত্যুর পর অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ব্রেন ডেথ ঘোষিত ব্যক্তির কিডনি দানের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারে ধর্মীয় নেতাদের যুক্ত করতে হবে।
কিডনি জটিলতা এড়াতে যথাসময়ে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তের ওপর জোর দিয়েছেন বিএসএমএমইউয়ের সহ–উপাচার্য এ কে এম মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নিয়মিত স্ক্রিনিং না করানোর কারণে দেশে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ যথাসময়ে শনাক্ত হয় না। এ কারণে কিডনি সমস্যাও যথাসময়ে শনাক্ত না হয়ে কিডনি রোগী বাড়ছে।
চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে সহকর্মীদের মধ্যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকার ওপর জোর দেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের চিকিৎসক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, একে অপরের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। চিকিৎসাসেবায় শুধু চিকিৎসকেরাই যুক্ত থাকেন না, নার্স প্যারামেডিক থেকে শুরু করে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরও ভূমিকা রয়েছে।
সূচনা বক্তব্যে কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাসচিব রুহুল আমিন রুবেল বলেন, দেশে প্রতিবছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় অনেকে একদম শেষ সময়ে এসে জানতে পারেন যে তাঁদের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক শামীম আহমেদ।