কেউ উন্নয়নের গতি থামাতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

0
109
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন সরকার দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। আপনাদের সকলের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।’ খবর বাসসের।

শনিবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে চলমান উন্নয়ন কাজের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনভাবেই উন্নয়নের গতি থামাতে পাবে না।’

যে সমস্ত লোক সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চোখে দেখে না, তাদেকে চোখের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের যে এসডিজি পরিকল্পনা সেটা আমরা মাথায় রেখেছি এবং ২০১০ থেকে ২০২০ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমাদের পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। সেজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনার পাশাপাশি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। তাদের হয় চোখ নষ্ট, যদি কারো চোখ নষ্ট হয়, তাহলে চোখের ডাক্তার দেখাতে পারেন। আমরা একটা খুব ভালো আই ইনিস্টিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে চোখ পরীক্ষা করলে, আমার মনে হয় তাহলে হয়তো তারা দেখতে পারবেন। আর কেউ যদি চোখ থাকতে অন্ধ হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি আমাদের বিরোধী কিছু লোক আছে যারা চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না। ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতেও পারবে না।

সরকার প্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে, অর্থ চোরাচালান করতে পারবে, ওই ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে। অস্ত্র চোরাচালানি, অর্থ চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এ গুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করতে পারবে না, এটাই হলো বাস্তবতা।

তিনি বলেন, আজকে এমন একটা দিন যেদিন সত্যিই আমি আনন্দিত। কারণ, যে কাজ আমরা শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ আজকে সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজ সম্পূর্ণ করারই উৎসব আমরা করছি। আর কিছুদিন পর দ্বিতীয় টিউবের কাজও সম্পন্ন হবে এবং পুরো টানেলটাই তখন আমরা উদ্বোধন করবো। একটা টিউবের নির্মাণ শেষ হওয়ায় সেটা আমি দেখতে চেয়েছি, আর এটা আমাদের বিরাট অর্জন বলেই আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন।

চট্টগ্রাম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিমি এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলোতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিমি এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন এবং ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।

দক্ষিণ টিউবের কাজ সমাপ্তি উদযাপনের আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রামে উদযাপনের স্থান পরিদর্শন করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কায়কাউস বলেন, টানেলটি জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ০ দশমিক ১৬৬ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি টানেলটি চট্টগ্রামের যানজট পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়নের কৃতিত্ব জনগণকে দিয়ে বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ২০০৮ সালে এবং টানা তিনবার নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়নের কাজগুলো করতে পেরেছি। সেজন্য আমি জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশকে বিশ্ব উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবেই মানুষ গ্রহণ করে। কিন্তু এখানে আমার একটি প্রশ্ন ’৭৫ এর পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে পরবর্তী ৮ বছর মিলিয়ে প্রায় ২৯ বছরেও বাংলাদেশ কেন উন্নতি করতে পারেনি? কারণ যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাতেই বিশ্বাস করতো না এবং এ কারণেই তারা এদেশকে উন্নত করতে চায়নি। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়নি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন, তিনি এই সংগঠন দিয়েই দেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কাজেই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সেই লক্ষে, যা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল।’

তাঁর সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনের হাইওয়েকে ৬ লেনের করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। মহেশখালী মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ওই এলাকাটা একটি ‘ডিপ সি পোর্টে’ পরিণত হচ্ছে। কাজেই সেদিক থেকেও এই অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার এয়ারপোর্টও আমরা উন্নত করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আমাদের এই টানেল বাংলাদেশের জন্যই শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই প্রথম। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হবে তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও গতিশীলতা পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে এটা আরও বেশি অবদান রাখবে।

‘চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় মেট্র্রোরেল হওয়ার পর চট্টগ্রামে এখন আমরা সমীক্ষা শুরু করেছি। এখানে পাহাড়, পর্বত তারপরেও কোথায় কতটুকু মেট্রোরেল করতে পারি তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। পাশাপাশি অনেকগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামে আমরা করে দিয়েছি। কাজেই চট্টগ্রামেও যেন মেট্রো রেল হয় সেটাই আমাদের ইচ্ছা।

তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ, চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অথবা কক্সবাজার সমস্ত এলাকায় একটি বিরাট যোগাযোগের নেটওয়ার্ক আমরা প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি, যা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে।

করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে বিশ্ব মন্দা ও বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে প্রতি ইঞ্চি অনাবাদী জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর ও জনগণকে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী, এবং সঞ্চয়ী হবার আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.