চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে বিদেশ ফেরত জামাতাকে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাইভেট কারে) করে বাড়ি ফিরছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার শাহনগর মাইজভান্ডার এলাকার বাসিন্দা মুসা আহাম্মেদ (৬২)। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই নাতনি আদিবা হোসেন ও আদিলা হোসেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ইউটার্ন করার সময় হঠাৎ ৩৫ টন ওজনের একটি কনটেইনার বহনকারী লরিটি তাঁদের বহনকারী গাড়িটিকে চাপা দেয়। প্রায় ৩০ মিনিট তাঁদের গাড়িটি কনটেইনারের নিচে চাপা পড়ে ছিল। এতে তাঁরা গাড়ির ভেতরে আটকা পড়েন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ির আরোহীদের উদ্ধারে অভিযান চালান। গাড়ির আরোহীরা যেভাবে চাপা পড়েছিলেন, ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা ধারণাই করতে পারেননি তাঁদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। শেষ পর্যন্ত মুসা আহাম্মেদ, তাঁর মেয়ের স্বামী আবু বক্কর (৪২), দুই নাতনি আদিলা হোসেন ও আদিবা হোসেনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানিয়েছেন, গাড়িচালক সামান্য আহত হয়েছেন। বাকি সবাই অক্ষত আছেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে রওনা দেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্ব দেন কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। আলাপকালে সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে কনটেইনারের চাপায় থাকা প্রাইভেট কারের অবস্থা দেখে তাঁরা ধারণা করেন, একজন মানুষও সেখানে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। তাঁরা উদ্ধারকাজ কীভাবে করবেন, সে রকম একটা পরিকল্পনা করছিলেন। এ সময় ভেতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুনতে পান। এতে নিশ্চিত হন ভেতরে থাকা লোকজন তখনো জীবিত রয়েছেন। কিন্তু সেখানে থাকা পুলিশের রেকার ৩৫ টন ওজনের কনটেইনারকে তুলে ধরার ক্ষমতা ছিল না। পরে তিনি পরিকল্পনা করেন কনটেইনারের এক প্রান্ত রেকার দিয়ে তুলে ধরবেন, যাতে চাপা পড়ে থাকা গাড়িটি থেকে আটকে পড়াদের বের করে আনা যায়। কিন্তু সেখানেও ঝুঁকি রয়েছে। যদি কোনো কারণে রেকারের লোহার রশি ছিঁড়ে যায়, তাহলে আর আটকা পড়াদের জীবিত উদ্ধার করা যাবে না। কিন্তু তাৎক্ষণিক এ রকম পরিকল্পনা করা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশকে দ্রুত বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
সুলতান মাহমুদ আরও বলেন, প্রথমে কনটেইনারের যে অংশে কারটি চাপা ছিল, সে অংশটি রেকার দিয়ে টেনে ওপরের দিকে তুলে ধরেন তাঁরা। বড় বড় কাঠের গুঁড়ি দিয়ে কনটেইনার ঠেকা দেন। কনটেইনারটি যখন উঁচু করে কাঠের গুঁড়ি দিয়ে আটকে রাখা হলো, তখন কারের ভেতরে থাকা যাত্রীদের সবাই জীবিত আছেন বলে নিশ্চিত হন তাঁরা। এরপর তাঁরা আর ঝুঁকি নিতে চাননি। বড় ক্রেনের অপেক্ষা করছিলেন। ১৫ মিনিট পর বড় ক্রেন নিয়ে এলেন। সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনারের যে অংশ আগে থেকে তোলা ছিল, সে অংশকে ক্রেন দিয়ে টেনে ধরেন এবং রেকার ভ্যান দিয়ে প্রাইভেট কারটি টেনে বের করে আনেন। এরপর একে একে তিন আরোহী ও চালককে জীবিত উদ্ধার করেন তাঁরা। আর প্রাইভেট কারে থাকা অপর এক শিশুকে দুর্ঘটনার আগমুহূর্তে কোনোভাবে জীবিত বের হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চালক সামান্য আহত হলেও অন্য চার যাত্রী সম্পূর্ণ অক্ষত। তবু তাঁদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গাড়িটি কীভাবে ৩৫ টন ওজনের কনটেইনারের চাপ বহন করল—এ বিষয়ে সুলতান মাহমুদ বলেন, এটি অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা। কোনো একটি সৌভাগ্যের কারণে দুর্ঘটনায় কনটেইনারটি পতিত হওয়ার পরও কনটেইনারের একটি কোনার অংশ সড়ক বিভাজকের সঙ্গে আটকে ছিল। এতে পুরোপুরি কনটেইনারটি গাড়িটিকে চাপা দিতে পারেনি। ফলে কারের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় তাঁরা আটকে ছিলেন। তাই তাঁরা প্রাণে বেঁচে গেছেন।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, দুর্ঘটনার পর সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।