কিশোর সাংবাদিকেরাও ছিল রাশিয়ার প্রচারণায়

0
121
আলেক্সান্ডার মালকেভিচ

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতে রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী ভাগনার গ্রুপ রাশিয়ার হয়ে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিনের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকার মানুষের হৃদয় জয় করতে রাশিয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

আলেক্সান্ডার মালকেভিচ নামের ওই ব্যক্তি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দখলকৃত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিভিন্ন রুশপন্থী টিভি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করেছেন।

প্রিগোশিনের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে মালকেভিচ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত রাশিয়ার হয়ে প্রচার চালিয়েছেন। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর দায়ে তাঁর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

পশ্চিমাদের কোন অস্ত্র কীভাবে কাজে লাগাচ্ছে ইউক্রেন

আলেক্সান্ডার মালকেভিচ
আলেক্সান্ডার মালকেভিচ

মালকেভিচ মূলত প্রিগোশিনের এলাকা সেন্ট পিটার্সবার্গে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে একটি টেলিভিশন পরিচালনা করতেন। তবে ২০২২ সালের গ্রীষ্মে তিনি ইউক্রেনে দখলকৃত এলাকাগুলোতে যান এবং খেরসন শহরকে তাঁর ঘাঁটিতে পরিণত করেন।

তাঁর প্রধান কাজ ছিল, ইউক্রেনে পুরোদমে রুশ অভিযান শুরুর পর দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে রুশপন্থী টেলিভিশন স্টেশন চালু করা। তাঁর পরিকল্পনাতেই খেরসনে তাভরিয়া টিভি, মেলিতপোলে জা টিভি ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে মারিউপোল ২৪ চালু হয়।

এসব চ্যানেলে ক্রেমলিনের প্রচার চালানো হয়। উদাহরণস্বরূপ তাভিরা টিভিতে সম্প্রতি প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানের কথা বলা যায়। ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানো নিয়ে মস্কো যেসব কারণ বলে থাকে, তা ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দর্শকদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। কারণ, মস্কোর কাছে আর অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। রাশিয়া এমন ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল যে আর কোনোভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিল না।’

তবে মালকেভিচের এসব চ্যানেলে স্বেচ্ছায় কাজ করবে, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। এটাই তাঁর কাজের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এই বাধা কাটাতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে মালকেভিচ খেরসনে একটি ‘মিডিয়া স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ইউক্রেনে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কর্মরত সংবাদকর্মীদের জন্য তিনি একটি বইও লিখেছেন। ‘রিয়াল রাশিয়ান জার্নালিজম ফর নিউ রিজিওনস’ নামের ওই বইটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মালকেভিচ পরিচালিত টিভি স্টেশনগুলোতে যোগ দেওয়া কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রাপ্তবয়স্ক ছিল না। জা টিভি ও তাভরিয়া টিভির দুজন প্রতিবেদক মাত্র ১৬ বছর বয়সে কাজে যোগ দিয়েছিল। বয়স বিবেচনায় ওই দুই কিশোরীর পরিচয় প্রকাশ করেনি বিবিসি।

মালকেভিচের এসব চ্যানেলে স্বেচ্ছায় কাজ করবে, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। এটাই তাঁর কাজের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কিশোর বয়সী ওই প্রতিবেদকদের একজন গোলা হামলায় আহত হয়। পরে ওই প্রতিবেদককে ক্রেমলিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্ডার অব ব্রেভারি পুরস্কার দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তবে খেরসনে মালকেভিচ খুব বেশি দিন কাজ চালাতে পারেননি। নভেম্বরে ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরটির দখল নেওয়ার আগে আগে তিনি কিছু সরঞ্জাম ও কর্মীদের নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এলাকা ছাড়ার সময় তাঁরা ক্ষোভের মুখে পড়েন। এ সময় এক রুশ সাংবাদিক নিহত হন। তিনি সাবেক এফএসবি কর্মী।

মালকেভিচের উত্থান যেভাবে

মালকেভিচ পরিচিতি পান মূলত ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসএ রিয়েলি নামের ওয়েবসাইট চালু করার পর। ভাগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিনের মালিকানাধীন আরআইএ এফএএনের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়েবসাইটটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আরআইএ এফএএন মূলত একটি প্রপাগান্ডা ও ভুয়া তথ্য প্রচারকারী মাধ্যম। সেন্ট পিটার্সবার্গের কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে ক্রেমলিনের পক্ষে প্রচার চালিয়ে থাকে।

কিশোর বয়সী ওই প্রতিবেদকদের একজন গোলা হামলায় আহত হয়। পরে ওই প্রতিবেদককে ক্রেমলিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্ডার অব ব্রেভারি পুরস্কার দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসএ রিয়েলি বেশি দিন টিকতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার মালকেভিচকে সাময়িকভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। প্রিগোশিনের বৈশ্বিক প্রচারে সহযোগিতা করায় পরবর্তী সময় তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ইউএসএ রিয়েলি চালু হওয়ার এক বছর পর মালকেভিচ সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে যান। সেখানে তিনি আরেক প্রপাগান্ডা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রিগোশিনের ঘনিষ্ঠ এক প্রচার সহযোগীর সঙ্গে যৌথভাবে দ্য ফাউন্ডেশন ফর ন্যাশনাল ভ্যালুজ প্রোটেকশন নামের ওই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।

জনমত যাচাই করতে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ম্যাক্সিম শুগালেই নামের এক ব্যক্তিকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর আগের বছর একই ব্যক্তি মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

ইউক্রেনে মালকেভিচের কর্মকাণ্ড রুশ সরকারের দৃষ্টি এড়ায়নি। স্বাধীনতা ঘোষণাকারী অঞ্চলগুলোতে টিভি প্রচারণার কারণে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.